৫ সিটি নির্বাচনে বিএনপির ‘উকিল’ মডেলদের উঁকিঝুঁকি!
জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে পাঁচ সিটির নির্বাচনে গেলে দলীয় অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হবে- বিএনপির এ অবস্থানের বিপরীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তারের মতো অনেকেই এখন প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। আসন্ন পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ না নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান তারা।
তফসিল ঘোষণার পর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডন যান। সেখান থেকে দেশে ফিরে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ‘আভাস’দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের বলেছেন, কয়েকদিনের মধ্যেই দলের সিগন্যাল পরিষ্কার করবেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তার বক্তব্য ইঙ্গিতপূর্ণ। শেষ পর্যন্ত তিনি দল থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র ভোট করবেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।
আরও পড়ুন: সিসিক নির্বাচনে বিএনপির ৪০০ নেতাকর্মী প্রার্থী হচ্ছেন
বিগত খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও দলের মহানগরের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুও প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। দলের পদে না থাকলেও তিনি বলছেন, আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেওয়া যায় না। তার বক্তব্যে স্পষ্ট যে তিনি ভোট করতে চান।
বরিশালে বিএনপিদলীয় সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রূপন মেয়রপ্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গাজীপুরে প্রার্থী হবেন দলীয় নেতা নূরুল ইসলামের ছেলে সরকার শাহ নূর ইসলাম। এছাড়া রাজশাহী সিটি নির্বাচনেও দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে, দল নির্বাচনে না এলে তিনি ভোট করবেন না বলেও জানিয়েছেন। রাজশাহীতে মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন রিমন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, আমরা দলের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করছি দল সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা রিভিউ করবে। প্রয়োজনে নির্বাহী কমিটির মিটিং থেকে দলের সর্বস্তরের বৈঠক করে সিদ্ধান্ত রিভিউ করা উচিত। কারণ খালি মাঠে কাউকে গোল দিতে দেওয়া ঠিক নয়, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকা উচিত। আন্দোলনের অংশ হিসেবে হলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন: ঈদের পর কি আন্দোলন আরও চাঙা করবে বিএনপি?
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি এখন রাজপথে আন্দোলন করছে। দলটি বর্তমান ইসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির সংলাপ, ইসি নিয়োগে গঠিত সার্চ কমিটিতে নাম না দেওয়াসহ অনেক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়নি। চলমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিএনপিকে আলোচনার জন্য চিঠি দিলেও দলটি তাতে সাড়া দেয়নি। এই ইসির অধীনে স্থানীয় বা কোনো সংসদ উপ-নির্বাচনেও অংশ নেয়নি বিএনপি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বেশ আগেই নিয়েছে বিএনপি।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বিএনপি যখন রাজপথের কর্মসূচিতে ঠিক সেসময় পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের ৯ মাস আগে পাঁচ সিটি নির্বাচনে বিএনপির নানামুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ যেন ভোটে অংশ না নেয় সেটিই এখন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। গত ৩ এপ্রিল ইসি সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ঘোষিত তফসিলে আগামী ২৫ মে গাজীপুর, ১২ জুন খুলনা ও বরিশাল এবং ২১ জুন রাজশাহী ও সিলেটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে বিএনপির যে দৃঢ় অবস্থান তা থেকে সরে এসে সিটি নির্বাচনে নেতাদের অংশ নেওয়ার আগ্রহে ক্ষুব্ধ দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিলে বা অংশ নেওয়ার পক্ষে মৌন সমর্থন করলে দলটির নেতাদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হবে। দলের সাধারণ নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সরকারের যোগসাজশ নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাবে। তৈরি হবে সন্দেহ। সিটি নির্বাচনে অংশ নিলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে বৈধতা দেওয়া নিয়ে দলে যে অস্বস্তি, সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল আবারও তার পুনরাবৃত্তি হবে বলেও মনে করছেন অনেকেই। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাই সিটি নির্বাচনে যদি কেউ অংশ নেয় তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি নেতাকর্মীদের।
আরও পড়ুন: জুনের মধ্যে তিন ধাপে পাঁচ সিটি নির্বাচন
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জাগো নিউজকে বলেন, সিটি নির্বাচন ইস্যুতে দলের কর্মসূচি থাকবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার। আমরা মনে করছি না কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে যাবে। যদি কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভোটে যায় তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে দল।
আরও পড়ুন: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার পর নির্বাচন: ফখরুল
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে দল অটল। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতিবাদে কর্মসূচির বিষয়ে দলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তিনি।
কেএইচ/এসএইচএস/জেআইএম