ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

সাক্ষাৎকারে সাদ্দাম হোসেন

রাজনীতি ছাত্রলীগকর্মীদের কাছে লাভ-লোকসানের বিষয় নয়

আল সাদী ভূঁইয়া , সালাহ উদ্দিন জসিম | প্রকাশিত: ১২:১৩ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রদের ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা ৪ জানুয়ারি, ১৯৪৮। সংগঠনটির বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। পঞ্চগড়ের এই সন্তান ডাকসুর এজিএস হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ছাত্রলীগের নতুন কমিটির দায়িত্ব নেওয়া, সংগঠনের কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সালাহ উদ্দিন জসিম ও আল সাদী ভুঁইয়া।

জাগো নিউজ: ছাত্রলীগের মতো এত বড় সংগঠনের নেতৃত্ব পেয়ে আপনার অনুভূতি কী?

সাদ্দাম হোসেন: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্ভরতার ঠিকানা। নেতাকর্মীদের প্রাণের স্পন্দন। কোটি শিক্ষার্থীর ভরসা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীদের কাছে কর্মী পরিচয়, জাতির পিতার আদর্শে উজ্জ্বীবিত একজন নাগরিক-তরুণ পরিচয় কিংবা শেখ হাসিনার অসাধারণ গণতান্ত্রিক-অর্থনৈতিক অভিযাত্রায় আমরা সারথি- এ অনুভূতিই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

‘পদ-পদবি ও সাংগঠনিক কাঠামোর বিন্যাস কিন্তু বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীদের কাছে আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য একটি কাঠামো মাত্র। এটি আমাদের ব্যক্তিগত অর্জন-বিসর্জনের কোনো বিষয় বলে আমরা মনে করি না। রাজনীতিটাকে আমরা ক্যারিয়ার হিসেবে দেখি না। রাজনীতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মীদের কাছে লাভ-লোকসানের কোনো বিষয় নয়। রাজনীতি আমাদের সমষ্টির কাছে একটি আদর্শিক লড়াই। আমরা মনে করি যে সুনির্দিষ্ট একটি দায়িত্ব আসা মানে সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়া, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সামনে আমরা সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারি। নেতাকর্মীদের কাছে আমরা আরও বেশি দায়বদ্ধ থাকতে চাই। সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সংবেদনশীল দায়িত্ব। এটি আমাদের আরও বেশি সংবেদনশীল করে তুলবে বলে আমি মনে করি।

জাগো নিউজ: ছাত্র রাজনীতিতে আপনার শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

সাদ্দাম হোসেন: স্বাভাবিকভাবে স্কুল-কলেজে থাকতেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের প্রতি এক অভূতপূর্ব ভালোবাসা জন্মায়। আমার বাবা একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। রণাঙ্গনে তার অসংখ্য স্মৃতি। জাতির পিতার ডাকে এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ এসব আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আগেই আমার এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা ছিল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবো, ছাত্রলীগের রাজনীতি করবো। আইন বিভাগের প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ ছিল। এটির কারণ যতটা না ছিল একাডেমিক তারচেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক।

আরও পড়ুন>> ছাত্রলীগের নতুন চ্যালেঞ্জ স্মার্ট বাংলাদেশ

‘আমি যখন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের জীবনী পাঠ করতাম, তাদের দেখতাম বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে আমি হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন শেষে আজ ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি।’

জাগো নিউজ: ছাত্রলীগের দায়িত্ব পাওয়ার পর আপনারা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসিত হয়েছেন, যা আগের কমিটিতে কম দেখা গেছে। আপনারা ছাত্রলীগকে কীভাবে নেতৃত্ব দেবেন? ছাত্রলীগ নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

রাজনীতি ছাত্রলীগকর্মীদের কাছে লাভ-লোকসানের বিষয় নয়

সাদ্দাম হোসেন: প্রথম কথা হচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা হচ্ছেন তৃণমূলের কর্মীরা। ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা অন্য কোনো দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা শীর্ষ নেতা- এ ধারণায় আমরা বিশ্বাস রাখতে চাই না। আমরা সংগঠন কর্মী। কর্মী হিসেবে সংগঠনের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। সে দায়বদ্ধতার জায়গাটি সাংগঠনিক কাঠামোর জায়গা অক্ষুণ্ণ রেখে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে চাই। এরই মধ্যে আমাদের অনেক সময় অতিবাহিত হয়েছে। এই সময়টি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা, সংগঠনকে সুসজ্জিত রাখা, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, একই সঙ্গে অপশক্তি বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য ছাত্র সমাজকে প্রস্তুত করা- এ আঙ্গিকে এখন পর্যন্ত আমরা কিন্তু সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

আরও পড়ুন>> ছাত্রলীগ করতে হলে অবশ্যই ভালো ছাত্র হতে হবে : সোহাগ

‘আমরা টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে চাই। আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ ছাত্রলীগের অনেক কর্মী মেধাবী, দক্ষ সাংগঠনিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ঋদ্ধ, ক্লিন ইমেজের অধিকারী, একাডেমিক জায়গায়ও কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছে। এর বাইরেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়। এ ধরনের একটি অসাধারণ টিম কিন্তু রয়েছে। আমরা একটি ভালো কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করতে চাই। একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই- সেটি হলো বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেবেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সেটি নয়, আমরা যেটি চাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেবে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ। এবং সেটি আমরা বাস্তবায়ন করে যেতে চাই। যে কারণে আমরা অংশীদারমূলক নেতৃত্বের কথা বলছি, টিম ওয়ার্কের কথা বলছি।’

রাজনীতি ছাত্রলীগকর্মীদের কাছে লাভ-লোকসানের বিষয় নয়

‘গঠনতান্ত্রিক যেসব বাধ্যবাধকতার কথা রয়েছে, সাংগঠনিকভাবে আমাদের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে, আমাদের যেন দায়বদ্ধতা থাকে সে জবাবদিহির জায়গাটি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য এবং নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্য কাউন্সিলকে গুরুত্ব দেবো। যেহেতু আমাদের বিভিন্ন জায়গায় কমিটি করতে গেলে সেখানে অনেক যোগ্য পদপ্রত্যাশী থাকে, আর এটিকে সাংগঠনিক নেতৃত্ব নির্বাচনের বৈশিষ্ট্যে পরিণত করতে হবে। এর মাধ্যমে কেন্দ্রের বার্তাটি আমরা মাঠ পর্যায়ে দিতে পারছি। আর মাঠ পর্যায়ের বার্তাটি আমরা অনুধাবন করতে পারবো।’

আরও পড়ুন>> যেমন আছেন ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা

জাগো নিউজ: গঠনতান্ত্রিকভাবে বিলুপ্ত কমিটির ক্ষেত্রে আপনারা কী পদক্ষেপ দেবেন?

সাদ্দাম হোসেন: এগুলো আমরা আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবো। এটির ক্ষেত্রে আমরা সাংগঠনিক-গঠনতান্ত্রিক কী উপায় রয়েছে সেটি যাচাই-বাছাই করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। যেহেতু আমরা ইনক্লুসিভ সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি।

রাজনীতি ছাত্রলীগকর্মীদের কাছে লাভ-লোকসানের বিষয় নয়

জাগো নিউজ: বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে সহাবস্থান নিশ্চিত করতে আপনার কী ভূমিকা থাকবে?

সাদ্দাম হোসেন: মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে গণতন্ত্র। এই গণতন্ত্র হচ্ছে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের ধারণা। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের কিন্তু সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে। সভ্য আত্মমর্যাদার জাতি হিসেবে অধিকারী হওয়ার অঙ্গীকার কিন্তু আমাদের মধ্যে রয়েছে। নির্বাচিত সরকারই নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনা করবে, সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে, রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করবে। এটি কিন্তু একটি জাতির মর্যাদার বিষয়। বর্তমানে যে সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা রয়েছে সেটি আমাদের ছাত্র সমাজের প্রাইম কনসার্ন। এই ধারা যেন যে কোনো মূল্যে অব্যাহত থাকে।

জাগো নিউজ: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

সাদ্দাম হোসেন: জাগো নিউজকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

এসইউজে/এএসএ/জেআইএম