বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন কতদূর?
বিএনপির নেতৃত্বে বৃহত্তর ঐক্য গঠন হবে এবং সেই ঐক্য নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে— দীর্ঘদিন ধরে শোনা গেলেও কার্যত সেই আন্দোলন আজও আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আসলেই ঐক্য গঠনের নামে যে সংলাপ হচ্ছে তার চূড়ান্ত পরিণতি কী?
রাজপথে সরকার পতনে সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একদফা কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে বিএনপি। এরই মধ্যে ছোট-বড় সমমনা ডান-বাম ও ইসলামী ২২টি দলের সঙ্গে প্রাথমিক সংলাপ শেষ করেছে দলটি।
আরও পড়ুন >> ‘দ্বিধায়’ আটকে বিএনপির বৃহত্তর ঐক্য গঠন
সংলাপ হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গেও। শরিকদের মধ্যে কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ-ভাসানী (একাংশ), মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা (একাংশ), অ্যাডভোকেট শেখ জুলফিকার রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), কাজী আবু তাহেরের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), আবু তাহের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামিক পার্টি, রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দল, সাইফুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ, অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ পিপলস লীগ ও অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে।
আরও পড়ুন >> যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি-এলডিপির ঐকমত্য
এছাড়া ২০ দলীয় জোটের বাইরে সরকারবিরোধী ডান-বাম ঘরানার দলগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন ও সাইফুল হকের নেতৃত্বাধীন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ড. রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য এবং মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের একাংশের সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি।
আরও পড়ুন >> ‘নতুন ঐক্য’ গড়ার চেষ্টায় বিএনপি, ‘ঈদের পর’ যুগপৎ আন্দোলন
জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সংলাপের সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি বিএনপি। তবে বিএনপি জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির বিজেপি এবং জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপের সংলাপ করার চেষ্টা করছে। শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে সংলাপেরও সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ পর্যন্ত সংলাপ করার সঙ্গে নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে চলমান সংলাপে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একাট্টা হয়েছে।
আরও পড়ুন >> রোববার জাতীয় দলের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ
একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছে তারা। দলগুলো জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনে বিএনপি রূপরেখায় কী উপস্থাপন করে, তার ওপর নির্ভর করছে যুগপৎ আন্দোলনের ভবিষ্যৎ। তবে সংলাপে বিএনপির সঙ্গে প্রায় সব ইস্যুতেই ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো।
আরও পড়ুন >> যুগপৎ আন্দোলনে গণফোরাম-বিএনপির ঐকমত্য
সূত্রমতে, যুগপৎ আন্দোলন ও ভবিষ্যতে সরকার গঠনের প্রশ্নে সংলাপে দেওয়া রাজনৈতিক প্রস্তাবগুলো ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। এসব দলের চাওয়া ও নিজের লক্ষ্য সামনে রেখে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করছে বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে প্রধান করে লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। শিগগির দ্বিতীয় দফার সংলাপ হবে সেসময় সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর চাওয়া-পাওয়া নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন >> ন্যাপের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে একমত বিএনপি
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলন তো শুরু হয়ে গেছে। এতদিন বিচ্ছিন্নভাবে হয়েছে, এখন হয়তো বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া হবে। যেমন- জ্বালানি ইস্যুতে ১১ আগস্ট কর্মসূচি। এমনিভাবে জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে কর্মসূচি হবে। যখনই সরকার একটা রাজনৈতিক দলের ওপর আক্রমণ করবে তখনই সবাই মিলে কর্মসূচি দেওয়া হবে। সর্বশেষ চূড়ান্ত দাবি ‘এক দফা এক দাবি সরকার’।
আরও পড়ুন >> যুগপৎ আন্দোলনে একমত বিএনপি-গণসংহতি: ফখরুল
তবে ১১ আগস্টের জ্বালানি ইস্যুতে পালিত কর্মসূচির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আলোচনা করে ঠিক করবো, যুগপৎ মানেই শুধু বিএনপি নয়, অন্য সব শক্তি মিলেই যাতে করা যায়। আমরা চেষ্টা করতে থাকবো। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, সময় এখনো অনির্ধারিত। প্রস্তুতিপর্ব শেষ হলেই ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন >> গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় সন্তুষ্ট ফখরুল
লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, সংলাপের পরে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট বা অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আমাদের কিছুই জানায়নি। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কিছু জানতে পারিনি। আমরা প্রত্যাশা করছি সরকারের ভ্রান্ত নীতির কারণে জ্বালানির দাম বাড়ায় জনগণের দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় অতি অল্প সময়ে বিএনপি ভালো কর্মসূচি দেবে এবং রাজপথে থাকবে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, সংলাপের পর বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমরা বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় জোটে ছিলাম, আছি এবং আনুগত্যস্বরূপ বিএনপির সাথে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে চাই।
আরও পড়ুন >> জেএসডির সঙ্গে বিএনপির সংলাপ বিকেলে
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের পদত্যাগ, ভোটের অধিকারসহ কিছু ইস্যুতে ন্যূনতম যে রাজনৈতিক ঐক্য বিরোধী দলে আছে। এ ঐকমত্যকে কেন্দ্র করে সমন্বিতভাবে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর প্রক্রিয়াটিও সবার উপলব্ধিতে রয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো ও সংবিধান সংস্কার।
আরও পড়ুন >> যুগপৎ আন্দোলনে একমত বিএনপি-গণসংহতি: ফখরুল
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা একটা বৃহত্তর প্ল্যাটফর্মে আন্দোলনে নামার টার্গেট নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। সেখানে বাম-ডান, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সব দলকে একত্রিত করতে চাই। সেই লক্ষ্যে পরিকল্পনামাফিক কাজ করছি। তাড়াহুড়া করবো না, সব দলের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলে ঐক্যের ফরমেট তৈরি করবো। আশা করছি, ভালো কিছুই হবে।
কেএইচ/এমএএইচ/জেআইএম