গভীর সংকটে কোণঠাসা সরকার, পতন অনিবার্য: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার এখন পুরোপুরিভাবে গভীর সংকটের মধ্যে রয়েছে। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী, এবার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলে এ সরকারের পতন অনিবার্য।’
তিনি বলেন, ‘দেশে একদিকে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন খাত সামাল দিতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। তারা জনগণের সমস্যা সমাধানে ফেল করেছে। দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বী। সরকারের ভয়াবহ দুর্নীতিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তারা এর কোনো সমাধান দিতে পারবে না।’
শনিবার (২৩ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মিট দ্য ওক্যাব’ অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। বিদেশি গণমাধ্যমের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের সংগঠন ওভারসিজ করেসপনডেন্স অব বাংলাদেশ (ওক্যাব) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এরই মধ্যে তার প্রভাবও পড়েছে। গ্যাসও পুরোপুরি আমদানিনির্ভর করেছে সরকার। দুর্ভাগ্যক্রমে এই সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও নিজেদের গ্যাস উত্তোলনের কোনো ব্যবস্থা করেনি। ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি ক্রাইসিস সৃষ্টি হয়েছে। সার কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গার্মেন্টস সেক্টর বিপদে পড়েছে। গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। সব কল-কারখানা জ্বালানি সংকটে ভুগছে। পরিবহন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। অনেক ধরনের বড় সংকট তৈরি হচ্ছে।’
‘মিট দ্য ওক্যাব’-এ বক্তৃতা করেন বিএনপি মহাসচিব
‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভারতের একটি প্রচ্ছন্ন ভূমিকা রয়েছে, এক্ষেত্রে বিএনপি দেশটির কাছে কী প্রত্যাশা করে’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার দেশের গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত করেছে। এমন পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করি।’
‘রাজনৈতিক সংকট সমাধানে করণীয় কী’ এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। সরকারের পদত্যাগই হচ্ছে একমাত্র সমাধান। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সংলাপের কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তা না হলে রাজপথে সমাধান হবে।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাংলাদেশের মিল প্রসঙ্গে বিএনপি নেতারা বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন, এ প্রসঙ্গে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘আমরা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে মিল দেখছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমে যাওয়া, বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংকট, লোডশেডিংসহ অনেক কিছুই দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। সেটাই আমরা বারবার সতর্ক করে আসছি।’
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন না করলে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে-এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার যদি দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা, মারামারি-কাটাকাটি দেখতে না চায়, তাহলে অবশ্যই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। দ্রুত নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিএনপির নেতৃত্ব প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমাদের চেয়ারপারসন। তিনিই আমাদের নেত্রী। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রয়েছেন, তিনি নেতৃত্ব দেবেন। এখানে অস্পষ্টতার কিছু নেই।’
অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা কাদির কল্লোল, সদস্যসচিব জার্মানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডিপিএ’র প্রতিনিধি নজরুল ইসলাম মিঠুসহ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও বিদেশি গণমাধ্যমের বাংলাদেশ প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
কেএইচ/এএএইচ/জিকেএস