ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

কক্সবাজার জেলার রাজনীতিতে পেশাদার অপরাধীরা

প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

ইয়াবার কালো থাবা এখন গ্রাস করে ফেলছে কক্সবাজারের রাজনীতি। মাদক ব্যবসা ছাড়াও খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতায় জড়িত পেশাদার অপরাধীরা রাজনৈতিক ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন। আর রাজনীতির ঢালের আড়ালেই অব্যাহত রাখছে অপরাধ তৎপরতা।

গত কয়েকদিন আগে কক্সবাজার শহরের এক কৃষকলীগ নেতা ১০ লাখ পিস ইয়াবাসহ এবং টেকনাফের এক যুবদল নেতা ৮৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার বিষয়টি রাজনীতিতে অপরাধীর ছায়া আরো স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর জেলা শাখা ক্রমশ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। এর ফলে সৎ ও পেশাদার রাজনীতিবিদরা আস্তে আস্তে রাজনীতির মাঠে ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছে। অনেকে ইয়াবা ব্যবসার প্রতিবাদ করতে গিয়েও এলাকা ছাড়া হয়েছেন। ইয়াবা ছাড়াও অন্যান্য মাদকের ব্যবসা, খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও ভূমিদস্যুতায় জড়িত পেশাদার অপরাধীরা আইনি ধরাছোঁয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে রাজনীতির ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে, তেমনি রাজনীতি জিম্মি হয়ে পড়ছে অপরাধীদের হাতে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোও ইমেজ সঙ্কটে পড়ে ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ছে এমনটি ধারণা রাজনৈতিক বোদ্ধাদের।

গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ট্রলারে প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের ১০ লাখ পিস ইয়াবা ও ৭ সহযোগীসহ কক্সবাজার শহর কৃষকলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন র্যাবের হাতে ধরা পড়ার দুইদিন পর ৮৬ হাজার পিস ইয়াবাসহ ঢাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের হাতে আটক হন টেকনাফ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব তৈয়বউল্লাহ। পরে দল থেকে তাকে বহিষ্কারও করা হয়।

এর আগে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ সরকারি দলের বিভিন্ন সংগঠনের ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, মৌলভী, ভান্তে ও সাংবাদিকসহ নানা শ্রেণি পেশার নারী-পুরুষ ধরা পড়েন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। মাদক ব্যবসায়ীরা বিশেষ সুবিধা দিয়ে রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে আসার ঘটনা রাজনীতির জন্য চরম অভিশাপস্বরূপ বলে মনে করছেন সৎ রাজনীতিবিদরা।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও অতিরিক্ত পিপি ফরিদুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, কালো টাকার প্রভাবে রাজনীতি কলুষিত হয়ে পড়ছে। রাজনীতি জিম্মি হয়ে পড়ছে অপরাধীদের কাছে। এটা রাজনীতির জন্য অশনী সঙ্কেত। এসব কারণে রাজনীতিবিদদের উপর জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা জাগো নিউজকে বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে দেশের নেতৃত্ব থাকে। কিন্তু তারা নিজেরাই যদি অপরাধ করে বেড়ান, তাহলে দেশের অবস্থা কী হবে?   
 
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দল ক্ষমতায় আসার পর সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগার দিন দিন বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে দলের নেতারাও বিশেষ সুবিধা নিয়ে চিহ্নিত অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ীসহ অবাঞ্ছিতদের দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ-পদবী দিচ্ছেন। মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন সরকারি প্রোগ্রামে নিচ্ছেন। এসব কারণে নব্য আওয়ামী লীগার হয়ে তারা আরও বেপরোয়া অপরাধ ঘটাচ্ছে। কিন্তু দলের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে নতুন করে কাউকে (বিশেষ করে জামায়াত-শিবির) আওয়ামী লীগে না ঢুকানোর। তার নির্দেশনা পালন হলে অথবা দলে ঢুকতে ইচ্ছুক ব্যাক্তির অতীত কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলে দলে অপরাধী স্থান পাওয়ার কথা নয়। আর ত্যাগী নেতা-কর্মীরা সজাগ থাকলে সরকারী দলে জড়িতরাও অপরাধ করে পার পাবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, বিএনপি ইয়াবা ব্যবসাকে চরম ঘৃণা করে। দলের সঙ্গে জড়িত কারও বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার প্রমাণ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় ইয়াবাসহ আটক টেকনাফ উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব তৈয়বউল্লাহকেও শুক্রবার বহিষ্কার করে তার দলের অবস্থান পরিস্কার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ জাগো নিউজকে বলেন, অপরাধী যে দলেরই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করা রাজনীতিবিদসহ সকলের কর্তব্য। এমনটি হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। কিন্তু এখন তার উল্টো হচ্ছে। ছিচকে চোর থেকে শুরু করে দাগী কোনো অপরাধী ধরা পড়লে রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা নির্লজ্জের মতো তদবির করতে আসেন। আটককে ছেড়ে দিতে অপারগতা জানালে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা প্রপাগাণ্ডা চালান তারা। তাই পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ও এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সৎ ব্যক্তিদের দলে নেয়া এবং অপরাধীদের এড়িয়ে চলা বাঞ্ছনীয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সায়ীদ আলমগীর/এমজেড/আরআইপি