নতুন বছরে যে কোন মূল্যে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি
নতুন বছরে যে কোন মূল্যে ঘুরে দাঁড়াতে চায় দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাহিরে থাকা দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি। অতীতের সব ব্যর্থতার গ্লানি মুছে রাজনৈতিক কৌশলেই ক্ষমতার মসনদে বসার চিন্তা করছে দলটি।
বিএনপির নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, বর্তমান সরকার তথা আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার একাধিক সুযোগ হাতছাড়া হলেও এবার কোন সুযোগ ব্যর্থ হতে দিবে না দলটি। বিএনপির যৌক্তিক সব আহ্বান প্রত্যাখ্যান করায় সরকারকে এক চুল পরিমাণ ছাড় না দেয়ার পক্ষে তারা।
নীতি নির্ধারকদের যুক্তি, বিএনপি গণমানুষের দল। যৌক্তিক যে কোন আন্দোলনে সাধারণ জনতা বিএনপির সঙ্গে থাকবে। সরকারের স্বৈরাচারী আচরণের প্রতিবাদে বিক্ষুদ্ধ জনতাকে সরকার আর আটকিয়ে রাখতে পারবে না।
এদিকে যে কোন মূল্যে ঘুরে দাঁড়াতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি কঠোর দিক নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে আবারো জেগে উঠবে দলটি। বিভিন্ন সূত্রে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক সদস্য এই প্রতিবেদককে বলেন, সরকার ঘুঘুু দেখেছে কিন্তু ফাঁদ দেখেনি। স্বৈরাচারী সরকার পৃথিবীর কোন দেশে টিকেনি। সময় যত বেশি ফুরাবে পরিণতি ততটা নির্মম হবে। এটাই ইতিহাস।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার সব কৌশল আপামর জনতা রুখে দিবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে চলতি বছরেই কাউন্সিল করার চিন্তাভাবনা করছেন বেগম জিয়া। পাশাপাশি ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি করে সংগঠনগুলোকে আরো শক্তিশালী করা হবে।
সূত্রটি আরো জানায়, সরকারকে চাপে রাখার জন্য নিজেদের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার পাশাপাশি বিভিন্ন কর্মসূচি পালনেরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বলা হলেও পরিস্থিতি বুঝে রাজপথে নামার চিন্তাও রয়েছে দলটির।
এদিকে নানা সমস্যায় জর্জরিত দেশের অন্যতম বড় এ দলটি আর পেছনে ফিরে তাকাতে চায় না। নতুন দিনগুলোকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই চিন্তাই করছেন দলটির হাইকমান্ড। নতুন বছরটিতে চমক দেখাতে না পারলেও সরকারকে উল্টো কোণঠাসায় রেখে জাতীয় নির্বাচনে বাধ্য করাই হবে বিএনপির মূল টার্গেট।
নতুন বছরে বিএনপির কি করা উচিত জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমত সাংগঠনিক ভিত্তিটাকে দ্রুত শক্তিশালী করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বিনা ভোটের মাধ্যমে যেভাবে ক্ষমতায় বসে আছে এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য বিপদজনক। তাই সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারকে বিএনপির চাপে রাখতে হবে।
নতুন বছরে কিভাবে এগিয়ে যেতে চায় বিএনপি, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই সেটা প্রমাণ হয়েছে। সর্বশেষ পৌরসভা নির্বাচনের নামে নীল নকশার যে নাটক সরকার মঞ্চস্থ করেছে এর মাধ্যম্যে জনগণের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোটায় নেমেছে।
নতুন বছরে শান্তিপূর্ণ অান্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করা হবে বলেও অাশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদী উল্লেখ করে দলের ভারপাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন বছরে বর্তমান সরকারকে হটিয়ে হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিএনপি।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ থেকে এখন গণতন্ত্র উধাও হয়ে গেছে। একদলীয় শাসনে জনগণ অতিষ্ট। তারা মুক্তি চাইছে। তাই নতুন বছরে এই ফ্যাসিবাদ সরকারকে পরাজিত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাইকে শপথ নিতে হবে।
এমএম/এআরএস/পিআর