ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

পৌর নির্বাচনে সরকারের নীল-নকশা বাস্তবায়ন হয়েছে

প্রকাশিত: ১০:৫৪ এএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৫

দেশজুড়ে পৌর নির্বাচনে সরকার নীল-নকশার বাস্তবায়ন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা ১৫৭টি পৌরসভায় অভিযোগ পেয়েছি এর সংখ্যা আরো বেশি হবে। আমাদের ধারণা ২০০ এর কম হবে না। সরকার এই নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করেছে।’

প্রমাণ হলো এ সরকারের কোনো জনপ্রিয়তা নেই :

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন দিয়েছে এটা প্রমাণ করার জন্য যে আমাদের জনপ্রিয়তা এখন কমেনি।’

তিনি বলেন, ‘ নৈতিক বৈধতার প্রশ্ন দেখা দিলেই এই অপকর্মগুলো করে। এই নির্বাচনে প্রমাণ হলো এ সরকারের কোনো জনপ্রিয়তা নেই। জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য একনায়কতান্ত্রিক দেশে যেমন নির্বাচন হয়, নিজেদের পছন্দের লোক ক্ষমতায় বাসানো জন্য, তেমন একটি নির্বাচন করা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা আছে ভোট গণনার সময় তারা (ক্ষমতাসীনরা) দখল করে নিতে পারে। তাদের মত করে ভোট গণনা করে নিতে পারে। রেজাল্ট শিটও তারা পরিবর্তন করতে পারে। আমাদের এজেন্ট বহুকেন্দ্রেই নেই, সেখানে রেজাল্ট শিট পরিবর্তন করা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। যেখানে এজেন্ট আছে সেখানে কি হয়েছে তা জানতে পারব কি হয়েছে। সেখান থেকে এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে আমরা জানতেই পারবো না কি হয়েছে।’

অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ফলফল পেতে থাকলে সর্বশেষ পর্যন্ত জানতে পারলে পরে জানাতে পারবো। তাছাড়া রাতে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দলের চেয়ারপারসনের বৈঠক আছে। আগমীকাল বা পরশু আমরা জানাতে পারবো।’     

সরকারের নীল নকশার নির্বাচন :

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের নীল নকশা অনুযায়ী আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে। আমরা যা আশঙ্কা করে ছিলাম তাই প্রমাণিত হয়েছে। আমরা বারবার বলেছি পৌরসভা নির্বাচন একটি প্রহসনে পরিণত হবে।’

তিনি বলেন, সারদিন আমরা অনলাইন, ইলেকট্রনিক সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যে চিত্র দেখেছি তা দেখে আমাদের বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অত্যান্ত ভীত সংন্ত্রস করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের গণতন্ত্রের চেহারা যদি এই হয়ে থাকে তাহলে সেই গণতন্ত্র হবে ভয়বহ এক গণতন্ত্র।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আমরা বারবার বলেছি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। কারণ তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দিতে চায় না একটি মাত্র কারণে তারা জানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি অবশ্যম্ভাবী। যেহেতু তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সেই কারণে কোনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন এ দেশে হতে দেবে না, যতদিন তারা ক্ষমতায় থাকে- যতদিন তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।’

নির্বাচনকে একটা ট্রাজেডিতে পরিণত করেছে :

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্বাভাবিক সুষ্ঠু নির্বাচনের লেশ মাত্র দেখতে পাইনি। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তো দূরের কথা মারামারি, গোলাগুলি, সংঘর্ষ, সহিংসতা পুরো নির্বাচনকে একটা ট্রাজেডিতে পরিণত করেছে। একজন রাজনৈতিক কর্মী  চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার যুবদলে নেতা নুরুল আমিন গুলিতে নিহত হয়েছেন। বেশ কয়েকটি স্থানে আহত হয়েছে কয়েক জন।’

‘নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা এবং সরকারের প্রতি তাদের অবিচল আনুগত্য নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরেকবার ধ্বংস করলো।’ যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ব্যালট পেপার ছিনতাই, প্রকাশ্যে সিল মারা, কেন্দ্র দখল করা এবং সহিংসতার মধ্য দিয়ে সরকারি দল বেশিভাগ পৌরসভা কেন্দ্র দখল করে নিয়ে গেছে। আমরা অত্যন্ত আশংকার সঙ্গে আরেকবার লক্ষ্য করলাম রাষ্ট্রের সকল যন্ত্র ব্যবহার করল নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার জন্য।’

‘আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করে বলেই সরকারের সকল চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ নির্বাচন অংশ নিয়েছি’, বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিয়েছিল তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। যদিও আমাদের এতটুকু বিশ্বাস ছিল। এটা আবারো প্রমাণ করল। এটা সত্য নির্বাচনের শুরু থেকেই বিএনপির প্রার্থীদের পদেপদে প্রতিবন্ধকতা, হয়রানি, হুমকি-ধামকি, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত করাসহ এমন কোনো কাজ নেই যে সরকার করেনি। আমরা বারবার নির্বাচন কমিশনের নজরে এনেছি, প্রতিকার চেয়েছি, কমিশন কোনো প্রতিকার করেনি।’

তিনি বলেন, ‘এটা সবাই দেখেছে কিভাবে সংঘর্ষ হয়েছে, ভোটারদের মেরে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সিল মারার উৎসব হয়েছে। এই প্রথমবারের মত দেখলাম নারী সংবাদ কর্মীর (৭১ টিভি ফারহানা) উপর আক্রমণ করা হয়েছে। সমকাল, এটিএননিউজের সাংবাদিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে গতকাল, আজকে চালান দেওয়া হয়েছে। সংবাদ কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে সেইভাবেই।’

‘এসব কিছুই প্রমাণ করে এই নির্বাচন আসলেই এটা প্রহসন ছিল। সাজানো একটি নির্বাচন ছিল, সব কিছুই তাদের নির্ধারিত ছিল সেইভাবেই তারা কাজ করেছেন’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার পর থেকেই বিএনপির প্রার্থী ও নির্বাচনী এজন্টেদের উপর নজরদারি বাড়ানো হয়। তারা যেন ভোট কেন্দ্রে না যেতে পারে, সেই জন্য পুলিশসহ প্রশাসন, আওয়ামী লীগের লোকজন হুমকি-ধামকি দিতে থাকে এমনকি ভোটকেন্দ্রের আশপাশে থেকে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে ভোটকেন্দ্র দখলের পায়তারা করে। রাতেই বাজেদপুর, লক্ষ্মীপুর, রায়পুরসহ অনেক ভোট কেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয়ভাবে রির্টার্নিং অফিসারকে লিখিতভাবে জানানো হয়।’

‘আজ সকাল থেকে বিএনপি প্রার্থী ও এজেন্টদের ভোটেকেন্দ্রের আশপাশে জড়ো হতে দেয়নি। প্রায় দেড় সহস্রাধিক কেন্দ্রে এজেন্টদের প্রসাশনের সঙ্গে জোরপূর্বক বের করে দেয়, প্রায় সকল কেন্দ্রে তারা জাল ভোট দেয়। ভোটাররা যাতে ভোটকেন্দ্রে যেতে না পারে সেই জন্য পারা মহলায় বোমা ফাটিয়ে সন্ত্রাস চালানো হয়। আজও রাস্তায় বোমা ফটিয়ে সাধারণ ভোটাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করা হয়’, অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

‘লাইন থেকে বিএনপির ভোটারদের বেছে বেছে বের করে দেয়ার অভিযোগও করেন তিনি। যে সমস্ত ভোটকেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে সেই সমস্তকেন্দ্রে পুনঃভোটের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন আবারো প্রমাণ করেছে, বর্তমান সরকার ও এই নির্বাচন কমিশন দ্বারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ভয়াবহ চেহারা জাতির সামনে আবার প্রমাণিত হয়েছে।’

৮ জনের নির্বাচন বর্জন :

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিএনপির কতজন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্জন করার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ দিয়ে নির্বাচন কমিশনের পুনঃনির্বাচনের দাবি জানানোর কথা বলেছি। তবে আমাদের কাছে খবর এসছে এ পর্যন্ত ৮ জন নির্বাচন বর্জন করেছেন।’

২০ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদকে তারাব পৌরসভার উপকণ্ঠ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ড. আবদুল মঈন খান, ড. এম ওসমান ফারুক, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসন, এএস এম আবদুল হালিম, মোহাম্মদ শাহজাহান, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ফজলুল হক মিলন, ড. আসাদুজ্জমান রিপন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের শরিক এনপিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা।

এফএইচ/এসএইচএস