ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে থাকবেন খালেদা

প্রকাশিত: ১১:২৪ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

ধানের শীষে ভোট চেয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে অবিচল থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।  সোমবার বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

জনগণের উদ্দেশে খালেদা বলেন, শাসকদল নির্বাচনের উপর অশুভ প্রভাব বিস্তারের যে পরিকল্পনা করেছে তা শান্তিপূর্ণ পন্থায় ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ান। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা আসন্ন পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতির্ণ হয়েছি। দেশবাসীকে অনুরোধ জানাই আসন্ন পৌর মেয়র নির্বাচনে আমাদের মনোনীত প্রার্থীদেরকে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আপনাদের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে ভূমিকা রাখবেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই স্বাধীনতা যুদ্ধে অমর শহীদদের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বীর মুক্তিযুদ্ধাদের অভিবাদন জানান খালেদা জিয়া। শেষে দেশবাসীকে নববর্ষের আগাম শুভেচ্ছা জানান তিনি।

লন্ডন সফর নিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, চিকিৎসার জন্য দুমাস দেশের বাহিরে ছিলাম। দেশবাসীর দোয়ায় আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি। লন্ডনে পরিবারের সদস্যদের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ পেয়েছি। এটা একদিকে আমার জন্য ছিল পরম আনন্দের অন্যদিকে গভীর বেদনার। আমার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো বিদেশে অবস্থানকালে চিরতরে চলে গেছে।

তিনি বলেন, আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা কোকোর শেষ যাত্রায় বিপুলভাবে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। তার জানাজায় লাখ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিল। এই সহমর্মিতার মাধ্যমে দেশবাসী জানিয়ে দিয়েছে যে শত অপপ্রচার সত্ত্বেও তারা আমাদের ভুল বুঝেনি। এই নিরব ভালবাসা সক্রিয় সমর্থনে পরিণত হলে কোন নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদীর পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব না।
 
খালেদা বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশ গেলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল যে আমি আদৌ দেশে ফিরবো না। আমি বরাবরই বলেছি যে দেশের বাহিরে আমার কোন ঠিকানা নাই। বাংলাদেশই আমার একমাত্র ঠিকানা।

বিএনপির এই নেত্রী বলেন, আমি বিদেশে অবস্থানকালে দেশে উদ্বেগজনক কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং এখনও বিক্ষিপ্তভাবে ঘটে চলেছে। বিদেশিরা আক্রান্ত হচ্ছে। ভিন্নমতের মানুষের ওপর সশস্ত্র চোরাগোপ্তা হামলা চলছে। ধর্মীয় সমাবেশ, মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয় আক্রান্ত হচ্ছে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরেও ঘটছে বোমা হামলার মতো সন্ত্রাসী ঘটনা। এ সবের পেছনে কারা জড়িত তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে পরস্পর-বিরোধী নানামুখী বক্তব্য আসছে।

তিনি বলেন,  দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদের শাসনকালে দেশে পবিত্র ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা করে জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছিলো। কিন্তু তারা সেই জঙ্গীদের দমন না করে বিরোধীদলের উপর  দোষ চাপিয়ে নির্যাতন চালাবার পথ বেছে নিয়েছিলো। আমরা পরবর্তীকালে সেই জঙ্গীবাদকে সাফল্যের সঙ্গে দমন করতে পেরেছিলাম। বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় জঙ্গীবাদীরা এখন আবারো নতুন শক্তিতে সংগঠিত হয়েছে কি-না এবং তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে কি-না, তা নিয়ে সবখানে সংশয় ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে।

খালেদা জিয়া বলেন, জঙ্গিবাদের বিষয়টি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরণের বিপদকে সম্মিলিতভাবে এবং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে। চার দিকের অশুভ আলামত ও বিপজ্জনক সব হামলার ঘটনার ব্যাপারে আমি সকলকে সতর্ক ও সজাগ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশে  যাতে  কোনোভাবেই নৈরাজ্যকর নিরাপত্তা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে দিকে আমি সকলকে নজর রাখতে বলবো।

তিনি আরো বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশে ২৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখন  নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই নির্বাচনটি খুবই তড়িঘড়ি করে ঘোষণা করা হয়েছে। রেওয়াজ থাকা সত্ত্বেও সময় স্বল্পতার অজুহাতে ইলেকশন কমিশন এ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেনি। অথচ এবারের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে। জাতীয় নির্বাচনের দলীয় প্রতীক এই স্থানীয় নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া খুবই প্রয়োজন ছিলো বলে আমরা মনে করি। দেশবাসী দেখেছেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন বছরের পর বছর ধরে অনুষ্ঠিত না হলেও সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। শাসক দলের সুবিধাজনক সময়ের জন্য তারা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা পৌর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় মাত্র ১০ দিন পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু খোঁড়া যুক্তি তুলে নির্বাচন কমিশন তা মানেনি।

খালেদা বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ব্যাপারেও কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরমধেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, আসন্ন পৌর নির্বাচনকেও প্রহসনে পরিণত করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। বিরোধীদলের  অফিস ও প্রার্থীর ওপর হামলা, সমর্থকদের হত্যা, প্রচারণায় বাধা দেওয়া, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, গ্রেফতার ও হুমকি চরম আকার ধারণ করেছে। বিরোধীদল সমর্থক ভোটার ও সম্ভাব্য এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। সন্ত্রাসী ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একশ্রেণির সদস্যকে এই অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে, সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ভোটকেন্দ্র দখলের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।  শাসক দলের মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী আচরণবিধি  বেপরোয়াভাবে লংঙ্ঘন করে চলছেন। এর কিছু কিছু খবর সংবাদ-মাধ্যমে প্রচারিত হলেও মামুলি কারণ দর্শানো নোটিশ এবং তারপর লোক দেখানো দুঃখ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন দায় সারছে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীনদের আচরণবিধি লংঙ্ঘন রোধে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মাধ্যমে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্ব ও অক্ষমতাই প্রকাশ করেছে।
 
খালেদা জিয়া আরো বলেন, চাপ ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে অনেক জায়গায় বিরোধীদলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়া হয়নি এবং প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ৭ জন মেয়র ও ১৩২ কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান অদ্ভুত সরকারের তথাকথিত বিরোধীদলের এক নেতা, যিনি আবার প্রধানমন্ত্রীরও দূত, তিনি বলেছেন যে, ভোটের দিন সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট শেষ হয়ে যাবে। এক মন্ত্রীও বলেছেন যে, ভোট হওয়ার আগেই নাকি বিএনপি’র পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, এবারেই প্রথম মেয়র নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনটি পরিপূর্ণভাবে দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে না। কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারছেন না। একটা জগাখিচুড়ি ব্যবস্থায় নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, এর পেছনে সরকারের ঘোর দুরভিসন্ধি রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। কারণ জাতীয় দাবি ছিল নির্বাচনটি হতে হবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।  এর আগে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করা হয়। সৃষ্টি হয় নজিরবিহীন রাজনৈতিক সংকট।

তিনি আরো বলেন, সরকার বিকল্প মিডিয়ার উপরেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক মিডিয়া ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের উপরও খবরদারি করছে। এই নির্বাচনে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আমরা একটি বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচার করতে চেয়েছিলাম। সরকারের পরোক্ষ চাপের কারণে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো সে বিজ্ঞাপনটি প্রচারেও রাজি হয়নি। এসব ঘটনায় সরকারে অগণতান্ত্রিক আচরণ আরো ন্যক্কারজনকভাবে ফুটে উঠেছে।

বক্তৃতার শেষাংশে সাংবাদিকদের উদ্দেশে খালেদা বলেন,  সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা বিশ্বাস করি, এবারের পৌর নির্বাচনে আপনারা আগের মতোই সাহসের সঙ্গে সত্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনে সচেষ্ট থাকবেন।

এমএম/এসকেডি/পিআর

আরও পড়ুন