সরকার কৌশলে ভুল করেছে : খালেদা
আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে সরকার নিজেদের পক্ষে যে জরিপের কথা বলছে তা সঠিক নয় দাবি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তাদের জরিপ ভরাডুবির জরিপ। সরকার কৌশলে ভুল করেছে। তারা ভেবেছিল বিএনপি নির্বাচনে আসবে না।
রোববার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) দ্বি- বার্ষিক কাউন্সিল ও নির্বাচন-২০১৫ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। মানুষ ধানের শীষে ভোট দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপি ৮০ ভাগ ভোট পাবে।
তিনি আরো বলেন, গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা তাদের বলয়ের বাহিরে কাউকে রাখতে চায় না। এই শাসন হিটলারী ফ্যাসিবাদী শাসনের কথা মনে করিয়ে দেয়।
খালেদা জিয়া বলেন, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর গণমাধ্যমের উপর নেমে আসে দুর্যোগ। পরবর্তীতে ৫ জানুয়ারির পর গণমাধ্যমের উপর তারা আরো দমন নিপিড়ন বাড়িয়েছে। সরকারের অপকর্ম তুলে ধরায় দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম বন্ধ করেছে তারা। টকশোর উপরও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। কোথাও সাংবাদিকরা নিরাপদ নয়। ক্ষমতায় এসে তারা ২৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে- যোগ করেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া আরো বলেন, অনলাইন নীতিমালার নামে বিরোধী মতের অনলাইন বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে সরকার। এই সরকার জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো ৬০ বছরের পুরোনো সংগঠন দখল করেছে। আইসিটি অ্যাক্ট, সম্প্রচার নীতিমালা এসব আইনকানুন করে গণমাধ্যম বন্ধের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ইইউ পার্লামেন্টে এসব কালাকানুন বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, সারাদেশ চলছে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের দখল উৎসব। ভোটের অধিকারও তারা দখল করেছে। এখন আর ভোটকেন্দ্রে যেতে হয় না। তারাই বাক্স ভরে দিচ্ছে। কত সহজ করে দিয়েছে!
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার কথা বিশ্ব মিডিয়াতে প্রচারিত হয়েছে। সাংবাদিক শওকত মাহমুদসহ আটক সাংবাদিকদের মুক্তি ও বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রমনা। ভোট আসলে উৎসব করে। ধানের শীষ অনেক দিন পর পাওয়ার কারণে উৎসাহ উদ্দিপনা বাড়ছে। সরকার মিথ্যা জরিপ করে প্রচারণা চালাচ্ছে। বলা হচ্ছে সাংবাদিকদেরকে ভোট কেন্দ্রে থাকতে দেয়া হবে। তাহলে লক্ষ্য পরিস্কার। বুঝতে হবে তারা ভোট চুরির জন্য এসব করছে।
তৃতীয়বারের মতো প্রমাণ হবে হাসিনা রকিব মার্কা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। বেশিদিন নয়। নিশ্চয় আমাদের সুদিন আসবে। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য কমিশনারদেরকে বড় দালাল বলে আখ্যা দেন তিনি।
পুলিশ বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আপনাদের চাকরি যাবে এটা সরকারের অপপ্রচার। আপনারা স্বাধীনভাবে দেশের জন্য কাজ করতে পারবেন।
দলের সঙ্গে যারা প্রতারণা করেছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, বেঈমান দালাল মীর জাফররা বেশিদিন টিকে না। বেঈমানের সঙ্গে কখনোই হাত মিলাই না।
বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম আবদুল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এ সময় সাংবাদিক নেতা রিয়াজ রহমান, রুহুল আমিন গাজী, কবি আবদুল হাই শিকদার, শওকত মাহমুদের স্ত্রী ফেরদৌসি মাহমুদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেস্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রীম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমদ তালুকদার, জাতীয়তাবাদী যুব আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. ফারুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল বাকী প্রমুখ।
এমএম/আরএস/এমএস