ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

আলোচনায় ছিল খালেদার চলমান মামলাগুলো

প্রকাশিত: ০৬:১৩ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

২০১৫ সালে উচ্চ আদালতের বেশ কিছু আলোচিত মামলা সাধারণ মানুষের নজর কেড়েছে। এসেছে যুগান্তকারী কিছু সিদ্ধান্তও। এর মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো, গ্যাটকো, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্র ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা ছিল আলোচনার শীর্ষে।

নাইকো দুর্নীতি মামলা আপিল
নাইকো দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ৭ ডিসেম্বর আপিল করেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন। মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে খালেদার করা রিটের রুল গত ১৮ জুন খারিজ করে দেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ।

রায়ে আদালত বলেন, বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হলো। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা চলতে কোনো বাধা নেই।

কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ২০০৮ সালের ৫ মে  মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রায় ১৩ হাজার ৭শ` ৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

পরবর্তীতে নাইকো মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ও নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রম স্থগিতের পাশাপাশি রুল দেন হাইকোর্ট। ওই সময় থেকে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত ছিল।

প্রায় সাত বছর পর চলতি বছরের শুরুতে মামলাটির কার্যক্রম আবারো চালু করার উদ্যোগ নেয় দুদক। গত ১৯ এপ্রিল রুল শুনানি শুরু হয় এবং ২৮ মে শেষ হয়। তার আগে গত ১৮ জুন রুল খারিজ করে রায় দেন হাইকোর্ট।

গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বাতিল চেয়ে গত ৫ আগস্ট করা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদন হাইকোর্ট খারিজ করে দেন। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে ২ মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন আদালত।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়াসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির এই মামলা দায়ের করা হয়। পরে  মামলার বাতিল চেয়ে রিট পিটিশন করা হয়। এছাড়া অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আরো একটি পিটিশন দাখিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। খালেদা জিয়ার করা দুটি রিট আবেদনের শুনানি শেষ গত ৫ আগস্ট তা খারিজ করে দেন আদালত।

২০০৭ ও ২০০৮ সালে এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেন। চলতি বছরের শুরুর দিকে মামলাটি আবারো সচল করার উদ্যোগ নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।

বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা
বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে গত ১৬ অক্টোবর খালেদার করা আবেদন খারিজ করে স্থগিতাদেশ তুলে নেন হাইকোর্ট। ফলে খালেদার বিরুদ্ধে এ মামলা চলতেও আর বাধা থাকে না।

জরুরি অবস্থার সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের করা এই মামলা বাতিলের জন্য খালেদার রিট আবেদনে ৭ বছর আগে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। তবে তার আইনজীবীরা বলেন, “আমরা সংক্ষুব্ধ। এ রায়ের বিরদ্ধে আপিল করব।”

মামলাটি বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠন পর্যায়ে রয়েছে। এ নিয়ে চার মাসে খালেদার তিনটি দুর্নীতি মামলা দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর সচল হয়। গ্যাটকো ও নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আবেদনও হাইকোর্টে খারিজ হয়ে যায়। মামলা দুটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং তার মন্ত্রিসভার ১০ সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা হয়। ওই বছর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতির অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।

খালেদা মামলাটি বাতিলের আবেদন করলে ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়। হাইকোর্টের ওই আদেশ আপিল বিভাগেও বহাল থাকায় আটকে যায় বিচার।

চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্র ও অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। আদালত খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির আবেদন মঞ্জুর করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষীর জেরা ও নতুন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের আদেশ দেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলা দুটি ঢাকার বকশীবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ভবনে বিশেষ এজলাসে বিচারকাজ চলছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার জেরা ও সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ আগামী বছরের ১৪ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।

খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকায় মামলায় কয়েকটি ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হননি। তার পক্ষে আইনজীবীরা হাজিরা প্রদান করেছেন। প্রায় দুই মাস লন্ডনে  চিকিৎসার শেসে গত ২১ নভেম্বর দেশে ফিরেন তিনি। তারপর ৩০ নভেম্বর নাইকো দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন বেগম খালেদা জিয়া।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় দুদক মামলা দায়ের করে। এ মামলায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক অভিযোগপত্র দাখিল করে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাষ্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

গত ১৯ মার্চ দুই মামলায় খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩।

এসএ/আরএস/এমএস