ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

এমপি লিটনের রাজকীয় পতাকা উত্তোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:২৬ পিএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫

গাইবান্ধা-১ আসনের (সুন্দরগঞ্জ) এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের জন্য ঢাকা থেকে বুধবার রাজকীয়ভাবে হেলিকপ্টারযোগে সুন্দরগঞ্জে যান। তার দেরির কারণে নির্ধারিত সময়ের আড়াই ঘণ্টা পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সুন্দরগঞ্জে পৌঁছোনোর পর অনুষ্ঠান শুরু হয়।

এমপির কারণে বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নিতে আসা শিশু-কিশোররা দুর্ভোগে পড়ে। তারা সকাল থেকে টানা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে।

নিয়মানুযায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। কিন্তু এমপি লিটনের আগ্রহের কারণে নির্বাহী অফিসার তা করতে পারেননি। অন্যদিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় অংশ এমপি লিটনের হাতে এবার সংবর্ধনা নেননি।  

এলাকাবাসী জানান, বেশ আগে থেকেই এমপি লিটন হেলিকপ্টারে সুন্দরগঞ্জে আসবেন খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সর্বস্তরে মিশ্র ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সৌরভ আহত হওয়ার ঘটনায় এমপি লিটনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনের রেশ কাটতে না কাটতেই তার এই রাজকীয় আগমন কেন তা নিয়ে বিভিন্ন ফোরামে আলোচনা শুরু হয়। সাধারণ মানুষও এই ঘটনাটি শুনে বিস্মিত হন। কারণ এর আগে এ জাতীয় ভ্রমণের কোন নজির নেই।  

উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বুধবার ১৬ ডিসেম্বর সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হয় কর্মসূচি। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ছিল শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ, বিদ্যালয় মাঠে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, নৈপুণ্য প্রদর্শন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।

liton

প্রশাসনের সূচি অনুযায়ী সকাল ৯টায় পতাকা উত্তোলনের সময় নির্ধারিত থাকলেও এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন আড়াই ঘণ্টা পর হেলিকপ্টারযোগে সুন্দরগঞ্জে আসায় বেলা সাড়ে ১১টার সময় আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক গোলাম কবির মুকুল জানান, এমপির হাতে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনায় দলের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সেই সময় এ রাজকীয় হেলিকপ্টার ভ্রমণ নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। একটি দরিদ্র এলাকায় কোন জনপ্রতিনিধির এভাবে আগমন কেউ স্বাভাবিক মেনে নিতে পারেনি।

এমপি লিটন বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এমপি যে কোনো বাহনেই আসুন না কেন সেটা তার ব্যাপার। কিন্তু তার এই বিলম্বের কারণে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে রাখার বিষয়টি অমানবিক।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড সূত্রে জানা গেছে, এমপির সাথে প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার কারণে তার কাছ থেকে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা গ্রহণ করেননি। তবে জানা গেছে, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লায়েক আলী খান মিন্টুসহ হাতে গোনা কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এমদাদুল হক বাবলু জানান, যে এমপি মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার এবং ডাকাত বলে গালি দেন তার হাতে সংবর্ধনা গ্রহণ অবমাননাকর। তাই আমরা তার হাতে সংবর্ধনা নেইনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল হাই মিলটন বলেন, কুয়াশার কারণে এমপিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিলম্বে আসে। এমপির মহোদয়ের জন্য অপেক্ষা করে আড়াই ঘণ্টা পর পতাকা উত্তোলনসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হয়।

তিনি বলেন, জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে সংসদ সদস্যের উপস্থিত থাকার বিষয়টি এই এলাকার একটি রেওয়াজ। এ ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করেও সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার একটি ঘনিষ্ট সূত্র দাবি করে, স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে এমপি আগেরদিন আসতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তাকে হেলিকপ্টারে আসতে হয়। এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। বিজয় দিবসের কর্মসূচি শেষ করে এমপি লিটন ওই হেলিকপ্টারেই বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

শিশু সৌরভ হত্যাচেষ্টা মামলায় এমপি লিটন বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালিন জামিনে আছেন।

অমিত দাশ/এসএইচএস/পিআর

আরও পড়ুন