সৃষ্ট বিতর্ককে মামুনুলের ‘ব্যক্তিগত বিষয়’ বললেন বাবুনগরী
হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ড এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে সৃষ্ট বিতর্ককে তার ‘একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন সংগঠনের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। এই অবস্থান থেকে এখনো মামুনুল হকের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি হেফাজত।
সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে রোববার (১১ এপ্রিল) চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে আল জামিয়াতুল আহালিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসায় সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের জরুরি বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাবুনগরী এ মন্তব্য করেন।
গত ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে অবস্থানকালে মামুনুল হককে ঘেরাও করা হয়। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন এক নারীও। ওই নারীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল। সেই নারী নিজেকে জান্নাত আরা ঝর্ণা বলে পরিচয় দেন।
পরে মামুনুলের সঙ্গে তার প্রথম স্ত্রীসহ একাধিক ব্যক্তির ফোনালাপের রেকর্ড ফাঁস হয়। মামুনুলের দাবিকৃত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আর ঝর্ণার প্রথম সংসারের বড় ছেলেরও একটি ভিডিও ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে ঝর্ণার প্রথম সংসারে ফাটলের পেছনে মামুনুলকে অভিযুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে আলোচনা ওঠে সংসদেও।
গত ৮ এপ্রিল বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লাইভে এসে মামুনুল বলেন, ‘স্ত্রীকে খুশি করতে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সীমিত পরিসরে সত্যকে গোপন করারও অবকাশ রয়েছে।’ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এর মধ্যেই হাটহাজারীতে হেফাজত নেতাদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মামুনুল হকের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের তরফ থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাবুনগরী বলেন, ‘আজকের সভায় কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে আলোচনা হয়নি। মামুনুল হককে নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা তার একান্ত ব্যক্তিগত। কাউকে অব্যাহতি দেয়ার কোনো কথা সভায় ওঠেনি।’
হেফাজত আমির সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের মাদরাসায় পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। গ্রেফতার ও মামলা দায়ের বন্ধ করতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলি চালিয়েছে। এসব বন্ধ না করলে ভবিষ্যতে কঠিন পরিণতি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ মাদরাসায় ঘুরে ঘুরে আয়ের উৎস কী, ছাত্র কতজন এবং কমিটিতে কে আছেন- এসব বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।’
এ সময় বাবুনগরী বলেন, ‘করোনার দোহাই দিয়ে সরকার মাদরাসা-মসজিদ বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছে। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, মসজিদে মুসল্লি সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া যাবে না, রমজানে ইতিকাফ ও তারাবিহ বন্ধ করা যাবে না। রমজান মাসে কওমি মাদরাসায় একটা কালেকশন (অনুদান সংগ্রহ) হয়। ওই কালেকশন দিয়ে মাদরাসা সারাবছর চলে। লকডাউন দিয়ে সরকার কালেকশন বন্ধেরও চেষ্টা করছে।’
সবশেষে হেফাজত আমির বলেন, ‘আমরা সরকারবিরোধী নই। সরকারের সঙ্গে আমরা যুদ্ধ করব না। তাছাড়া সরকার পতন আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তারা প্রয়োজনে আরও দুইশ’ বছর ক্ষমতায় থাকুক। এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে সরকারকে ইসলামের সঙ্গে সমঝোতা করে চলতে হবে। না হয় কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
এসব দাবি মানা না হলে হেফাজত কী করবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের আমির বলেন, ‘কঠোর আন্দোলন করা হবে।’
আগামী ২৯ মে হাটহাজারী মাদরাসায় বড় করে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলন হবে বলেও জানান হেফাজতের আমির।
এদিকে বাবুনগরী প্রেস ব্রিফিংয়ে মামুনুল হক বিষয়ে কথা হয়নি দাবি করলেও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে মামুনুল প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে হেফাজত নেতারা নিজেদের সরকারবিরোধী নন প্রচার করে মামুনুল হককে নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি ধামাচাপা দিতে চাইছেন। এরপরও পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব না হলে মামুনুল অব্যাহতি নিতে পারেন।
মিজানুর রহমান/এইচএ/জেআইএম
সর্বশেষ - রাজনীতি
- ১ খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
- ২ আওয়ামী লীগকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলার যৌক্তিকতা নেই: মঈন খান
- ৩ দোসররা আওয়ামী লীগকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে: জাতীয় নাগরিক কমিটি
- ৪ বাংলাদেশ পাকিস্তানও হবে না, আফগানিস্তানও হবে না: ডা. শফিকুর রহমান
- ৫ চট্টগ্রামকে ভারতের অংশ করার উসকানি, জামায়াতের নিন্দা