কারাবরণ ঠেকাতে আত্মগোপনের কৌশলে বিএনপি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গ্রেফতার হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছেন দলটির অন্যান্য নেতাকর্মীরা। গ্রেফতার এড়াতে আপাতত আত্মগোপনের কৌশল অবলম্বন করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। দলীয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
দলটির নেতাকর্মীরা মনে করছেন, সরকার যেহেতু হঠাৎ করে বিএনপির বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে চলে গেছে। তাই আপাতত আত্মগোপনের কৌশল অবলম্বন করা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। গত ৫ জানুয়ারির অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই অনেক নেতাকর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে এদের মধ্যে কয়েকজন ক্ষণিকের জন্য প্রকাশ্যে আসলেও আবারও আত্মগোপনে চলে গেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানসহ দলটির প্রায় ৬০ শতাংশ নেতাকর্মী এখনও পলাতক রয়েছেন।
তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গয়েশ্বর রায়কে আবারও গ্রেফতার করায় আরও ২০ শতাংশ নেতাকর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে মনে করছেন বিএনপির মহানগর পর্যায়ের নেতারা। এই দুই নেতাকে গ্রেফতারে রাজধানীর বেশিরভাগ নেতাকর্মী নিজেদের বাড়ি ছেড়ে রাতে অন্যত্র থাকছেন।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় থেকেও দলে পদ না পাওয়া বেশ কয়েকজন জাগো নিউজকে জানান, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে দেশের জনপ্রিয় দল হওয়ার পরও আত্মগোপন কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের।
তারা মনে করেন, যথা সময়ে কাউন্সিল করে রাজপথে ত্যাগি ও যোগ্যকর্মীদের দিয়ে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকে সাজাতে পারলে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বা সরকার হার্ডলাইনে গেলেও আত্মগোপন কৌশল অবলম্বন না করে রাজপথেই সরকারকে মোকাবেলা করা যেত, পাল্টা জবাবও দেয়া যেত।
তাদের যুক্তি, অধিকার কেউ কাউকে স্বেচ্ছায় দেয় না। তা নানা কৌশলে আদায় করে নিতে হয়।
তবে এ রকম সংকট থেকে উত্তরণের উপায় কী, এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, দালাল ও সুবিধাবাদীদের হাত থেকে বিএনপিকে রক্ষা করে যতো দ্রুত সম্ভব নতুন করে কমিটি গঠন করতে হবে। আর এতে যোগ্যরা যাতে রাজনীতি করার সুযোগ পায় সেদিকে কড়া দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলে আবারও রাজপথে সক্রিয় হতে পারবে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাহিরে থাকা বিএনপির সেই যৌবনে অনেক আগেই ভাটা পড়েছে। এ রকম সংকট থেকে উত্তরণ এত দ্রুত সম্ভব হবে না বলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এদিকে সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আবারও রাজপথে সক্রিয় হওয়ার চিন্তা করেছিল বিএনপি। তবে সরকার আবারও ধরপাকড় শুরু করায় রাজপথে দাঁড়ানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের আশার আলো। স্বার্থের রাজনীতি বিএনপির অনেক ক্ষতি করেছে। তবে আত্মগোপন কৌশল অবলম্বন করলেও খালদো জিয়া নির্দেশ দিলে রাজপথে সবাই সক্রিয় হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন জাগো নিউজকে বলেন, মামলা-হামলা ও নির্যাতনের কারণে অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। এগুলো তো সঙ্গত কারণেই হয়েছে। তবে বিএনপি খুব শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাভভোকেট আহমদ আজম জাগো নিউজকে বলেন, সরকার যেভাবে অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে এ রকম পরিস্থিতিতে কে না ভয় পাবে? আমি নিজেও সব সময় ভয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, মির্জা ফখরুল বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বচ্ছ একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত। তাকেও ৭ বার কারাগারে নেয়া হয়েছে। তিনি তিনশ’ ৩২ দিন কারাগারে ছিলেন। গয়েশ্বর রায়ের মতো বিএনপির নেতারা তো পালিয়ে যাবেন না? পুরোপুরি কতৃত্ববাদী রাজতন্ত্রের মতো দেশ শাসন করছে সরকার।
বর্তমান বাস্তবতায় আত্মগোপনে থাকাটা খুবই স্বাভাবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্য কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ রকম পরিস্থিতি নেই।
এমএম/জেডএইচ/আরএস/এমএস