‘তুই দুর্নীতিবাজ’ ‘তুই লুটেরা’ ‘তুই ধর্ষক’ আওয়াজ তুলতে হবে : ইনু
‘তুই রাজাকার’ এর মতোই ‘তুই দুর্নীতিবাজ’, ‘তুই লুটেরা’, ‘তুই ধর্ষক’ আওয়াজ তুলে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু।
শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে জাসদের সহযোগী যুব সংগঠন জাতীয় যুব জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতির আলোচনার কেন্দ্রেবিন্দুতে কয়েকটি প্রশ্ন আছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে চলবে, না ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে চলবে? বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার গণতন্ত্রের পথে এগুবে, না কি স্বৈরতন্ত্রের পথে এগুবে? বাংলাদেশে আইনের শাসন, সুশাসনের পথে এগুবে, না কি দুর্নীতি-লুটপাটের পথেই চলবে? বাংলাদেশে সমাজ ও অর্থনীতি বৈষম্যের পথেই এগুবে, ধনী আরও ধনী হবে, গরিব আরও গরিব হবে, স্বাধীন দেশেও গরিব থাকবেই, স্বাধীন দেশেও কেউ খাবে আর কেউ খাবে না অবস্থা থাকবেই, না কি বৈষম্য কমিয়ে সমতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধান বর্ণিত সমাজতন্ত্রের পথে এগুবে? এসব প্রশ্নের উত্তর যুব সমাজকে দিতে হবে। এটা যুব সমাজের ওপর জাতীয় কর্তব্য, ইতিহাসের দায়িত্ব, সমাজের দাবি।
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সমাজের মানুষ যে অন্যায়, অত্যাচার, অনাচার, ধর্ষণ, নির্যাতন, অত্যাচার, ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট, দখলবাজি, দলবাজি, ক্ষমতাবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, হয়রানিতে জর্জরিত ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সেগুলোরও প্রতিকার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজাকাররা যেমন সমাজে মাথা উচু করে চলতে পারে না, ঠিক তেমনি দুর্নীতিবাজ-লুটেরা-ধর্ষকদের সমাজে মাথা উচু করে চলতে দেয়া যাবে না। তাদের বেপরোয়াভাব দমাতে ‘তুই রাজাকার’ এর মতোই ‘তুই দুর্নীতিবাজ’, ‘তুই লুটেরা’, ‘তুই ধর্ষক’ আওয়াজ তুলে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল বলেন, অপরাধী যেই হোক তার ঠিকানা জেলখানা। কোনো দল ও সংগঠন অপরাধীদের ঠিকানা হতে পারবে না। অপরাধীদের আশ্রয়দাতা নেতাদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। অপরাধীদের সাথে নেতাদের সন্ধিবিচ্ছেদ করে দিতে হবে।
ইনু বলেন, যুবদের অধিকার, মর্যাদা, সম্মান প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি দেশ, জাতি, জনগণ, সমাজের প্রতি যুবদের দায়িত্ব আছে। তাই জাতীয় রাজনীতির বিষয়েও যুবদের ভূমিকা আছে। প্রাথমিকভাবে জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য ধারণ, জাতীয় সংগ্রামের চেতনা ধারণ, মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ, সংবিধানকে ধারণ করতেই হবে। এর বাইরে মানবসমাজের প্রগতির, মানবসমাজের মুক্তির, মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, অসৎ রাজনীতিক-অসৎ আমলা-অসৎ ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি-লুটপাটের সিন্ডিকেট ধ্বংস করে দিতে হবে। আইনের শাসন ও সুশাসনের প্রশ্নে যুবরা চুল পরিমাণ ছাড় দেবে না। এসবের বিরুদ্ধে যুববিদ্রোহ ও সামাজিক প্রতিরোধ আজ সময়ের দাবি।
জাতীয় রাজনৈতিক কর্তব্য, যুবদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত, বেকার যুবদের বেকারভাতা আদায়ের দাবির পাশাপাশি অনাচার-অবিচার-ধর্ষণ-নির্যাতন-দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে যুববিদ্রোহ ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য যুবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সভা মানে নেতাদের সভা। মানে যুব জোটের সবচাইতে সেরা, যোগ্য, দক্ষ, পরিপক্ক, অভিজ্ঞ, বুঝদার, সমঝদার, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান, চৌকশ নেতাদের সভা। গোটা সংগঠন পরিচালনার, নেতৃত্ব দেয়ার পাশাপাশি দেশের, নিজের জেলা, উপজেলা, এলাকার যুবদের সমর্থন ও আস্থা আদায়ের দায়িত্ব আপনাদের।
হাসানুল হক ইনু বলেন, বয়সের মাপকাঠিতে মানুষের একটি অংশ যুবকাল, যৌবন। যুবকাল হচ্ছে বাধ না মানা উত্তাল সময়। পুরাতনকে ছুড়ে ফেলে নতুনকে স্বাগত জানানোর সময়। করোনার মধ্যে সভা। নতুন স্বাভাবিকতায় অভ্যস্থ হওয়ার প্রয়াস।
জাতীয় যুব জোটের এ সাধারণ সভায় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, কার্যকরী সভাপতি অ্যাডেভোকেট রবিউল আলম। উপস্থিত ছিলেন জাসদের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিউদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল, ওবায়দুর রহমান চুন্নু।
জাতীয় যুব জোটের সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- জোটের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল কবির স্বপন, সহ-সভাপতি কাজী সালমা সুলতানা, আসিফুর রহমান বাবু, আমিনুল আজিম বনি, ইঞ্জিনিয়ার হারুন অর রশিদ সুমন, প্রদীপ কুমার রায়, প্রভাষক আমিনুল ইসলাম কহিনুর, শুভংকর দে বাপ্পা, একরামুল হক খান সোহেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আক্তার বাবু, মুহাম্মদ সামসুল ইসলাম সুমন প্রমুখ।
এইউএ/বিএ/জেআইএম