চাঁদাবাজি বন্ধ হলে পূর্বের ভাড়াতেই চলবে গণপরিবহন
জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করলে মালিকরা পূর্বের ভাড়াতেই গণপরিবহন চালাতে পারবে বলে মত দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক গণপরিবহনের ভাড়া ৮০ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে মাহমুদুর রহমান মান্নার এমন বিবৃতি।
মান্না বলেন, করোনার এই সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চালানোর জন্য ৫০ শতাংশ সিট খালি রাখার কথা বলা হয়েছে। দেশের সব অফিস খুলে দেয়ার পর কোনো পরিবহনের পক্ষে আদৌ এটা মানা সম্ভব নয়। এই অজুহাতে পরিবহন মালিকরা বাস ভাড়া দ্বিগুণ করার দাবি জানিয়েছে এবং বিআরটিএ ৮০ ভাগ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এটা কার্যকর হলে তা করোনা মহামারিতে আর্থিক সংকটে থাকা জনগণের ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করবে। যেই মুহূর্তে দেশের জনগণকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার কথা, সেখানে উল্টো তাদের ওপর আর্থিক চাপ তৈরি করা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
তিনি বলেন, করোনার সময় কিছুদিন তারা কিছু কম যাত্রী নিয়ে চললেও যে ভাড়া তারা নেবে, করোনা সংকট কেটে যাবার পর যখন আগের মতো করে তাদের সার্ভিস চলবে, তখন ভাড়া আর আগের জায়গায় ফিরে আসবে না। এই দেশের পরিবহন সিন্ডিকেট সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকলেও এটা নিশ্চিতভাবেই বলে দেয়া যায়। এর মানে করোনা দীর্ঘদিনের জন্য বাস ভাড়ার এক নিপীড়নের পথ তৈরি করে দেবে।
মান্না বলেন, করোনা সংকটে পরিবহন নেতারা মালিক, শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ায়নি। অথচ বছরের পর বছর ধরে তারা প্রতিদিন গণপরিবহন থেকে চাঁদা তুলছে। পরিবহন মালিক, শ্রমিকরা দুই মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতি বছর ২ হাজার কোটি টাকা চাঁদা তোলার পরও সংকটে এই নেতাদেরকে কারও পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। এই চাঁদাবাজি বন্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার পরও আমাদের দেশে তার কোনো প্রভাব নেই। জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করলে মালিকরা পূর্বের ভাড়াতেই গণপরিবহন চালাতে পারবে।
সরকারবিরোধী এই নেতা বলেন, সরকার গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কেবলমাত্র একটা গাইডলাইন দিয়েছে। কিন্তু তা কার্যকর করার জন্য কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু এই অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর পায়তারা করছে। একটা জনবিচ্ছিন্ন সরকারের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশিকিছু আশা করা যায় না। তবুও যেহেতু সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা তাদের হাতে, এ কারণে কোনোভাবেই গণপরিবহনের ভাড়া না বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
‘সেই সাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাই। আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণের হার এখনও ঊর্ধ্বমুখী। প্রায় সকল বিশেষজ্ঞগণ এই অবস্থায় অঘোষিত লকডাউন শিথিল করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন এবং ঈদের পর জুন মাস সবচেয়ে ভয়াবহ সময় হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন। তারপরও সরকার দেশের প্রান্তিক জনগণের খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে অসমর্থ হওয়ায় সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। লকডাউন খুলে দেয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিণতি পর্যবেক্ষণ করে দেশের বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে এখনই সবকিছু খুলে দেয়ার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি।
কেএইচ/এমএআর/এমকেএইচ