দুই বছর পর বাসায় ঈদ করবেন খালেদা
দুই বছর অর্থাৎ টানা চারটি ঈদ কারাগারে কাটানোর পর এবার গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ঈদ উদযাপন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে দলীয় নেতাকর্মী বা অন্যদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন না তিনি। ঈদ উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধি জিয়ারতে সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে দলীয় কর্মসূচি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, আগামী সোমবার (২৫ মে) ঈদের দিন যথারীতি মেজ বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমার সঙ্গে খালেদা জিয়ার দেখা হতে পারে। প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দুই মেয়ে প্রতি ঈদ দাদি খালেদা জিয়ার সঙ্গে করতে লন্ডন থেকে ঢাকায় এলেও লকডাউনের কারণে এবার তারা আসছেন না।
দুর্নীতি মামলার সাজার কারণে গত দুই বছরে চার ঈদ কারাবন্দি অবস্থায় কাটাতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দিলে গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাস সাজা স্থগিত রেখে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তির পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় ওঠেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এখন সেখানেই আছেন তিনি।
এদিকে ঈদ উপলক্ষে ইতোমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাণী দিয়েছেন।
এবারের ঈদ উদযাপন প্রসঙ্গে শনিবার (২৩ মে) রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বড় কাজটা হচ্ছে আমি নিজে যেন এই করোনাভাইরাসের বাহক না হই। অর্থাৎ আমি যেন ভাইরাসটি কারও মধ্যে ছড়িয়ে না দিই। সেজন্য সবার প্রতি অনুরোধ, যে যেখানে আছেন, সেখানেই ঈদ উদযাপন করুন। সংকট কেটে গেলে, পৃথিবী শান্ত হলে আমরা আবার মিলিত হব। একসঙ্গে ঈদ করব।’
করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ মানুষ তো বটেই, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও খালেদা জিয়া ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কোনো প্রোগ্রাম থাকছে না। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন না ম্যাডাম। এখন মূলত যার যার জায়গায় সেফ থাকাটাই বেশি জরুরি। সে কারণে ঈদ উপলক্ষে ম্যাডামের কোনো প্রোগ্রাম রাখা হয়নি। তবে দেশবাসীকে ম্যাডাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জীবনে এমন ঈদ আরেকবার এসেছিল। সেটা ছিল ১৯৭১। আতঙ্ক, শঙ্কা, দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে ঈদ করেছিলাম। এবার আতঙ্ক, শঙ্কা, দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে ঈদ করতে হচ্ছে। তবে পার্থক্য এই যে, সেবার শুধু আমরা (বাঙালি জাতি) আর এবার গোটা বিশ্ব এক ভিন্ন রকম ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার ও শায়রুল কবীর খান জানিয়েছেন, ঈদের দিন বেলা ১১টায় স্থায়ী কমিটির নেতারা দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধি জিয়ারত করবেন। সেখানে অন্য কোনো নেতাকর্মীদের না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
দলীয় নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে বিএনপির হাইকমান্ড থেকে সব পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে, যিনি যেখানে আছেন, তিনি সেখানেই পবিত্র ইদুল ফিতর উদযাপন করবেন। সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ পরিবারের সঙ্গে ঈদের দিনটা পার করবেন। সাধ্য মতো অন্যকে সহযোগিতা করবেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
অর্থাৎ যারা ঢাকায় আছেন, তারা ঢাকায় ঈদ করবেন। যারা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে আটকা পড়েছেন, তারা এলাকাতেই ঈদ করবেন। খুব প্রয়োজন না হলে ঈদ উপলক্ষে ঢাকা ত্যাগ অথবা গ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা না দেয়ার ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের এবারের ঈদ
প্রায় একযুগ ধরে লন্ডনে ঈদ করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এবারও তিনি সেখানে স্ত্রী-কন্যা, প্রয়াত ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী, তাদের দুই মেয়ে, দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে ঈদ করবেন।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঈদ করবেন ঢাকার উত্তরার বাসায়। করোনা দুর্যোগ শুরুর পর থেকেই কোয়ারেন্টাইনে আছেন তিনি। মাঝে মধ্যে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ব্রিফিং করা ছাড়া বাসা থেকে বের হন না ফখরুল। ঈদটাও কোয়ারেন্টাইনেই হবে তার।
বিগত বছরগুলোতে নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁও এবং ঢাকার মধ্যে সমন্বয় করে ঈদ করেছেন ফখরুল। দলের চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান থাকলে ঈদের দিনটা ঢাকাতেই থেকেছেন তিনি। ঈদের পরের দিন যেতেন ঠাকুরগাঁওয়ে। আর চেয়ারপারসনের শুভেচ্ছা বিনিময় না থাকলে ঠাকুরগাঁওয়েই ঈদ করে আসছিলেন তিনি। তবে এবার ঈদ করবেন বাসায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও এবার ঢাকার গুলশানের বাসায়ই ঈদ করবেন। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর বাসা থেকে বের হননি তিনি।
ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘একশো বছর আগে পৃথিবীতে একবার ‘স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি’ হয়েছিল। সেবার প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। কিন্তু এভাবে কাউকে ঘরবন্দি থাকতে হয়নি। কারণ সেবার সংক্রমণের ধরনটা ছিল ভিন্ন। শুধু আমি কেন? একশো বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের কেউ এ ধরনের সংকট দেখেনি। এই সংকটের মধ্যে ঈদ আনন্দ বা উৎসবের চিন্তা করার সুযোগ নেই। এখন বেঁচে থাকাটাই বড় কথা। বেঁচে থাকলে অনেক ঈদ আসবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরুদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ঈদ করবেন ঢাকায়। তারা প্রত্যেকেই ঢাকার গুলশান-বনানীর বাসায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
তবে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান ঈদ করবেন নিজ জেলা চট্টগ্রামে। করোনা দুর্যোগ শুরুর আগে চট্টগ্রামে গিয়ে সেখানে আটকা পড়েছেন তারা। এবারের ঈদ সেখানেই উদযাপন করবেন তারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষিয়ান রাজনীতিক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ঈদ করবেন ঢাকায়। প্রবীণ এই রাজনীতিকও গুলশানের নিজ বাসায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন। অন্যবার ঈদের দিন দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও এবার তা হচ্ছে না করোনার কারণে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঈদ করবেন রাজধানীর আদাবরের বাসায়। করোনা সংকটে সবচেয়ে সক্রিয় এ নেতার গত চার ঈদ কেটেছে নয়াপল্টন কার্যালয়ে। এবার তিনি ঈদ করবেন পরিবারের সঙ্গে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মো. শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মো. আব্দুল আউয়াল খান, মো. শরিফুল আলমও ঈদ করবেন ঢাকায়।
ঈদ উপলক্ষে দলীয় কোনো নির্দেশনা রয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল আউয়াল বলেন, এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বক্তব্য দিয়েছেন। তাছাড়া আমাদের তেমন কোনো নির্দেশনা নেই। এখন তো ত্রাণ বিতরণ বা মানুষের পাশে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো নির্দেশনা নেই।
কেএইচ/এইচএ/এমএস