সর্বদলীয় পরামর্শক সভায় করোনাকে ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি
করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় ‘সমন্বিত উদ্যোগ’ এবং ‘জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে। সোমবার সকালে সেগুন বাগিচার রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয় ভবনের পঞ্চমতলায় গণতান্ত্রিক বাম জোটের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘সর্বদলীয় পরামর্শক সভা’ থেকে এই দাবি উত্থাপিত হয়।
সর্বদলীয় এই পরামর্শক সভায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি, সিপিবি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কল্যাণ পার্টিসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের শীর্ষ নেতারা স্কাইপের মাধ্যমে এই পরামর্শসভায় অংশ গ্রহণ করেন।
পরামর্শ সভায় স্কাইপে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান, বাসদের খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের প্রধান টিপু বিশ্বাস।
স্কাইপে আরও যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, বাম ঐক্যজোটের আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ নাসু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণসংহতি আন্দোলন প্রধান জোনায়েদ সাকি, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপাতি এম এ সবুর।
সভার সূচনা বক্তব্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ করোনাভাইরাস সংক্রমণকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে তা মোকাবিলায় সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন ‘আমরা শুরু থেকেই সব রাজনৈতিক দল, ছাত্র-যুবকসহ সামাজিক শক্তি, সাংস্কৃতিক সংগঠন, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞদের ঐক্যবদ্ধ করে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছি। সবার আকাঙ্ক্ষার অংশ হিসেবেই সমন্বিত উদ্যোগের লক্ষ্যে আজকেরে এই সভা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আজকে এখানে আমাদের সঙ্গে স্কাইপে যুক্ত হয়েছেন। তারা ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন বলে আশা রাখি।’
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য আমি সমর্থন করি। জাতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের এই করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা করতে হবে। এককভাবে এটা সম্ভব না। সম্মিলিতভাবে করতে হলে মতবিনিয়ম করা, ঐক্যমত গঠন করা এবং সারা জাতিকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।’
কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘এখানে কোনো সংকীর্ণ চিন্তা না করে জাতীয় ঐক্যমত সৃষ্টি করতে হবে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছেন তাদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা দিতে হবে। সবাইকে নিয়ে এটা করা সম্ভব। এককভাবে কোনো দল বা কোনো সংগঠন পারবে না। আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে সব শক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ থেকে সচেতনভাবে কাজ করছি, ভেতরের সমস্যাগুলো তুলে ধরেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার সেগুলোকে কখনোই গুরুত্ব দেয়নি। আজকে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে এটা খুবই অপ্রতুল। আবার যা দেয়া হচ্ছে তাতেও দলীয়করণ হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এগুলো থেকে ঊর্ধ্বে উঠতে না পারলে এই করোনাভাইরাস মোকাবিলা কোনোভাবে সম্ভব না। সবচেয়ে ভয়াবহ দিন আসছে সামনে। আমরা সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশপ্রেমকে সামনে রেখে, সততাকে সামনে রেখে এ পরিস্থিতি যদি হ্যান্ডেল করা না যায় তাহলে আরও বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়ব, অনেকে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কাও করছেন।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও বৈশ্বিক মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় যেকোনো উদ্যোগে শামিল হতে আমরা প্রস্তুত আছি। এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে দম্ভ, অহংকার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিহার করে এই ঐক্যমত প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে অবশ্যই সরকারকে। কারণ পুরো দায়িত্বটা সরকারের। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের অবহেলা এবং আমি জানি না তারা এটাকে নেগলেট করেছেন কী কারণে যার ফলে অনেক বড় সমস্যায় পড়েছি। আমরা বিশ্বাস করি জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর রহমতে এই মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম হব।’
করোনাভাইরাস সংক্রামণ মোকাবিলায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী দলীয় পরিকল্পনা তুলে ধরে ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে জাতীয় দুর্যোগ কমিটি গঠন করতে হবে। সবাইকে নিয়ে, সব শ্রেণির মানুষকে নিয়ে, ১৬ কোটি মানুষকে নিয়ে, সব সামাজিক শক্তিসহ সব পেশার মানুষকে নিয়ে এই কমিটি করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি না।’
সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘এই মহাদুর্যোগ একা নয়, ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। এটা করতে হবে। আমি এখনো আহ্বান জানাব সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করার। সরকারি যন্ত্র, রাষ্ট্রীয় যন্ত্রসহ সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার। একাত্তরে আমরা যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকাল মোকাবিলায়ও আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজের সঞ্চালনায় এই পরামর্শ সভায় সিপিবির আবদুল্লাহ কাফী রতন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এমএফ/জেআইএম