করোনা পরিস্থিতিতেও নদী রক্ষায় বাসদের আন্দোলন চলবে
করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা এবং নদী-পানি রক্ষার আন্দোলন একসঙ্গেই চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।
বাসদ ঘোষিত আগামী ২০-২২ মার্চ ঢাকা থেকে তিস্তা ব্যারেজ অভিমুখে তিস্তা মার্চের পরিবর্তীত কর্মসূচি হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সারাদেশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে তিস্তা মার্চের কর্মসূচি স্থগিত করে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের ঘোষণা আগেই দেয়া হয়েছিল।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে বাসদের উদ্যোগে ঢাকা-তিস্তা ব্যারেজ মার্চ করে ভারত কর্তৃক একতরফাভাবে পানি প্রত্যহারের প্রতিবাদ, জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সরকারের নতজানু নীতির প্রতিবাদ করার কর্মসূচি ছিল। করোনার ভয়াবহতা, সংক্রমণ ঝুঁকি বিবেচনা করে আমরা তিস্তা মার্চ কর্মসূচি স্থগিত করেছি। কিন্তু ভারতের পানি আগ্রাসন নিয়ে জাতীয় সংকটের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন চলমান রাখার অংশ হিসেবে এই আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতেও আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে কর্মসূচি পালন করলাম। বাংলাদেশ নদী ও পানির দেশ। পানির প্রবাহ বন্ধ হলে দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘ভারত তিস্তা নদীতে বাংলাদেশের উজানে গজল ডোবায় ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তার পানি অনৈতিক ও একতরফাভাবে প্রত্যাহার করায় তিস্তা মরছে, উত্তরবঙ্গের ৯টি জেলার কৃষি হুমকির মুখে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে উত্তরবঙ্গ আজ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখী। শুধু তিস্তা নয়, আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্পের নামে বাঁধের মালায় বাংলাদেশকে ঘিরে ফেললে তা বাংলাদেশের প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ভয়ংকর ঝুঁকিতে ফেলবে। ইতোমধ্যে ফারাক্কা বাঁধের কারণে সুন্দরবন হুমকির মুখে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবনাক্ততা এবং রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ ঘটে চলছে। এতে প্রতিবছর লাখ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের। সরকারের নতজানু হয়ে থাকা নীতির কারণে বাংলাদেশ তার পানির ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।’
‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের গাল ভরা বুলির আড়ালে আমাদের পানির অধিকার যেন হারিয়ে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। শুধু ভারতের পানি আগ্রাসন নয়, দেশের মধ্যে দখল দূষণেও নদীর মৃত্যু ঘটছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’, - যোগ করেন বাসদের এই নেতা।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমনের বিরুদ্ধে কথার বাগারম্বর না করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।হাসপাতালে করোনা শনাক্তকরণের প্রয়োজনীয়সামগ্রী, ডাক্তার-নার্স-স্বাস্থ্য কর্মীর সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ, ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিক, সাংবাদিক, পুলিশসহ সবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন নদী-পানি-জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব নইম জাহাঙ্গীর, বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, বাসদ ঢাকা নগর নেতা খালেকুজ্জামান লিপন প্রমুখ।
এইউএ/জেডএ/পিআর