খালেদার দেশে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন
চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করার কথা বলা হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যথাসময়ে দেশে ফিরে না আসায় বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। চিকিৎসার জন্যই খালেদা জিয়া লন্ডনে অবস্থান করছেন নাকি অন্য কারণে সেখানে অবস্থান করছেন তা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
এদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর লন্ডনে যাওয়ার পর ১ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা ছিল তাঁর। পরবর্তীতে ৩ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে জানানো হয়েছিল। পরে আবারো তারিখ পরিবর্তন করে ৮ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়।
জানা গেছে, সর্বশেষ নির্ধারিত তারিখ তথা ৮ অক্টোবরও দেশে ফিরছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। কবে নাগাদ তিনি দেশে ফিরছেন এ তথ্যও নেই বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতার কাছে।
লন্ডন বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসার পাশাপাশি বাকি সময়টা রাজনীতির পেছনেই ব্যয় করছেন তিনি। দলকে সুসংগঠিত করতে ও দ্রুত সময়ে ক্ষমতার মুখ দেখতে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানর পরামর্শে নানা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে, দেশে ফিরেই এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার কাজ শুরু করবেন খালেদা জিয়া। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী ফের দলকে চাঙ্গা করার কাজে হাত দেবেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে নতুন কাউন্সিল ও দেশের কয়েকটি জেলায় সফর করার চিন্তা করছেন খালেদা।
এছাড়া লন্ডনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গেও ধারাবাহিকভাবে বৈঠক অব্যাহত রেখেছেন তিনি। এসব বৈঠকে গত আন্দােলনগুলো ব্যর্থ হওয়ার কারণ এবং ভবিষ্যত আন্দােলনে সফলতার কৌশল নিয়েই আলোচনা করা হচ্ছে।
তবে চিকিৎসা ও রাজনীতিতে সময় দেয়ার পাশাপাশি আট বছর ধরে লন্ডনে অবস্থান নেয়া ছেলে তারেক রহমান ও তার স্বজনদের সময় দিচ্ছেন খালেদা জিয়া।
লন্ডনে অবস্থানরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও জিয়া পরিবারের বড় ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান ও নাতনি জাইমা রহমান এবং ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শামিলা রহমান, তাঁর দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানের সঙ্গে আবেগঘন সময় পার করছেন তিনি।
অবশ্য লন্ডন সফরের আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল জানান, ব্যক্তিগত সফরে খালেদা জিয়া লন্ডন যাচ্ছেন। এ সফরের উদ্দেশ্য চোখ ও পায়ের চিকিৎসা এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো।
এছাড়া জানানো হয়েছিল, পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান নিজেই তার শাশুড়ির চিকিৎসার বিষয়ে সমন্বয় ও দেখভাল করবেন। সে অনুযায়ী চিকিৎসার কাজগুলো সমন্বয় ডা. জুবাইদাই করছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির মুখপাত্র ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, ‘ম্যাডাম মূলত চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন। চিকিৎসার ফাঁকে ফাঁকে তারা যেমন পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন, তেমনি তাদের আলোচনার মধ্যে অবশ্যই দলীয় বিভিন্ন বিষয় চলে আসবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে দলের একজন হিসেবে আমার মধ্যেও ইতিবাচক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ইতিবাচক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে আমাদের দলের লাখ লাখ নেতা-কর্মীদের মধ্যেও। আশা করি ম্যাডাম দেশে প্রত্যাবর্তনের পর বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মধ্যদিয়ে আমাদের সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ হবে।
যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘পারিবারিক আবহের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ের মাঝে তারা দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে অবশ্যই দল, রাজনীতি ও দেশ নিয়ে আলোচনা করবেন। তাদের এ আলোচনার মধ্যদিয়ে আমাদের দলের বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বের হয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি।’
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফেরার পর প্রথমে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এরপর দু’টি আন্দোলনে হতোদ্যম হয়ে পড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে তিনি বেশ কিছু জেলা সফরও করতে পারেন। এরপর বছরের শেষের দিকে দলের জাতীয় কাউন্সিলের দিকে মনোযোগ দেবেন তিনি।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তাদের দু’জনের সাক্ষাতে সাংগঠনিক অনেক কিছুই সেখানে ঘটবে, এটা আমাদের আকাঙ্ক্ষা। সে লক্ষ্যে সারাদেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা প্রত্যাশা জেগে উঠেছে। দেশে ফেরার পর মূল দলসহ প্রতিটি অঙ্গ-সংগঠন যোগ্য ও দক্ষ নেতাকর্মীদের দিয়ে তিনি পুনর্গঠন করবেন। এর মাধ্যমে বিএনপি বর্তমান স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করছে তাতে সফল হবে, ইনশা আল্লাহ।’
এমএম/এসএইচএস/এমএস