ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

ক্ষমতাসীন দলের কর্মকর্তাদের নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৫৬ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২০

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কর্মকর্তাদের ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড কিন্তু আমরা জানি। কে গাড়ির অনুমোদন নেয়ার জন্য ফাইল বদল নিয়ে মন্ত্রীর কাছে গেছেন, কারা নিজের স্কুল পারমিশন নেয়ার জন্য সরকারি জমি নিয়েছেন- এসব খবর আমাদের কাছে আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারপরে দেখা যাচ্ছে, এ মানুষগুলোকে যাদের কোনো মোরালিটি (নীতি) নেই, তাদেরকে নির্বাচনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এবং তাদেরকে দিয়েই আবার নতুন যে যন্ত্র তৈরি করেছে ইভিএম মেশিন, যে মেশিন পৃথিবীর সমস্ত দেশে রিজেক্টেড (বাতিল) হয়ে যাচ্ছে, সেই মেশিন কখনোই ভোটারের যে ইচ্ছা, যে সেখানে ভোট দিতে যায়, তার প্রতিফলন না ঘটানোর মতো যথেষ্ট কৌশলের মধ্যে রয়েছে। এটাকে ম্যানুপুলেট (কারসাজি) করা যায়।”

ইভিএমের বিরোধিতা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এর বিরোধিতা করেছি। আমরা বলেছি যে, ইভিএম দিয়ে কখনোই মানুষের যে রায়, তার প্রতিফলন হবে না। আমরা এখনও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এর বিরোধিতা করছি।’

বিএনপির মহাসিচব বলেন, ‘গতকাল (সোমবার) চট্টগ্রামে উপনির্বাচন হয়েছে। ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে যেতেই দেয়নি। তার আগে বোমা মেরে লাঠিসোঁটা দিয়ে ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়েছে। তারপরে জিজ্ঞাসা করেন বলবে যে, আপনারা পারেননি। পারবো কোত্থেকে? যে গুন্ডা, যে লাঠি মারে সন্ত্রাসী করে, তার সঙ্গে ভদ্র লোকেরা সাধারণ মানুষেরা পারবে কীভাবে? দ্যাটস দ্যা রিয়েলিটি। যারা ভোটার তারা তো মারামারি করে না। তারা তাদের অধিকারটা প্রয়োগ করতে যায়, সেটা প্রয়োগ করতে দেয়া হয় না।’

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা আজকে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এমন একটা সমাজ তৈরি করছে, এমন একটা রাষ্ট্র তৈরি করছে যে সমাজ এবং রাষ্ট্র দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা সেজন্য বলি , বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণত হতে চলেছে। তারপরও বলি, হতাশ হবেন না, ছেড়ে দেবেন না। নেভার গিভ-আপ। যত কষ্ট আসুক, যত যন্ত্রণা আসুক, যত অত্যাচার-লাঞ্ছনা আসুক, এ দেশের মানুষ বার বার উঠে দাঁড়িয়েছে, তরুণরা উঠে দাঁড়িয়েছে, দাঁড়াবে, দাঁড়াচ্ছে। সব জায়গায় প্রতিরোধ হচ্ছে, প্রতিরোধ হবে।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী হেল্প সেল’- এর উদ্যোগে বিগত আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের হাতে গুম, হত্যা, পঙ্গু হওয়া নেতাকর্মীর পরিবারের সদস্যদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে গুম হওয়া ১০ পরিবারের সদস্যদের হাতে শিক্ষাবৃত্তি হিসেবে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে আমরা এই আক্রমণের স্বীকার হচ্ছি। আওয়ামী লীগ যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে সংগ্রাম করেছিল, গণতান্ত্রিক লড়াই করেছিলল, তারাই স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে দানবে পরিণত হয়েছে। একবার তারা ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। সেটা করতে যাওয়ার আগে তারা একইভাবে দেশপ্রেমিক হাজার হাজার তরুণ-যুবককে হত্যা করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৮ সালের পরে তারা একইভাবে শুধু খোলসটা পাল্টিয়ে দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে তাদের একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে, নিজের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্যে তারা সংবিধান সংশোধন করেছে। এই বাংলাদেশ সৃষ্টির যে চেতনা ছিল, মুক্তিযুদ্ধের যে মূল চেতনা ছিল, তাকে ধবংস করে দিয়েছে, গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে দিয়েছে। তারা তাদের শাসনব্যবস্থাকে পাকাপোক্ত করার জন্য রাষ্ট্রের যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে যারা প্রতিবাদ করতে চেয়েছিলেন, রাজপথে নেমে এসেছিলেন তারা আজকে অনেকে আজকে আমাদের মাঝে নেই। তাদের অনেককে এনফোর্স ডিজএপিয়ারেন্স (গুম) করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছেন আর খোঁজ নেই, গুম হয়ে গেছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে অথবা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গোটা দেশকে, গোটা জাতিকে একটা নির্যাতনের কারখানা তৈরি করে ফেলেছে।’

ফখরুল বলেন, ‘আজকে শিশুরা এখানে আছে। ওরা প্রতি মুহূর্তে ভাবে যে, তার বাবা ফিরে আসবে, আসে না। মা আছেন ভাবেন যে, এই বোধহয় ছেলে দরজা নক করলো, আসে না। স্ত্রী অপেক্ষা করে থাকে কখন তার প্রিয় মানুষটা পাশে আসবে। এই পরিস্থিতি একটা অসহনীয় একটা পরিবেশ, একটা দম বন্ধ করা একটা পরিবেশ। এই সমাজ আজকে কীভাবে এই ধরনের একটা পরিস্থিতি সহ্য করছে- এটাও একটা চিন্তার ব্যাপার। এরা সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নগুলোকে ছারখার করে দিয়েছে, তছনছ করে দিয়েছে। এজন্য তাদের দাম্ভিকতার শেষে নেই। তাদের কথা শুনবেন, তারা যে বক্তব্য রাখে, তারা যে কথা বলে, তার মধ্যে তাদের যে দাম্ভিকতা এটা প্রকাশ পায়। প্রতিমুহূর্তে এতো যে তারা নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে- এজন্য তাদের এতটুকু অনুতাপ পর্যন্ত কখনো হয় না। একনায়কদের, স্বৈরাচারদের কখনো অনুতাপ হয় না।’

‘হত্যার মহোৎসব চলছে’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের সরকারে যারা আছেন এরা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছেন। তারা বক্তৃতা যখন করেন মনে হয় যেন কিছুই হয়নি দেশে, চমৎকার পরিবেশ আছে, দেশের মানুষ খুব ভালো আছে। প্রতিদিন পত্রিকায় দেখবেন একটা হত্যার মহোৎসব চলছে। আজকে একটা মারাত্মক খবর দেখলাম, মহাসড়কে মানুষের শরীরের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৩০৪ বছরের শিশুকে পর্যন্ত হত্যা করা হচ্ছে। এই যে হত্যা, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ যেন একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। মানুষ এখন আর কথা বলে না, কথা বলার সুযোগ নেই। এটাই চেয়েছিল ওরা (আওয়ামী লীগ)। ভয়ভীতি ছড়িয়ে দিয়ে পুরো ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা, সেটাই করেছে তারা।’

‘মিডিয়ার সেন্সরশীপ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সব জায়গায় ভয়। এই যে সাংবাদিক ভাইয়েরা যারা আজকে এখানে খবর নিচ্ছেন, ছবি তুলছেন তারা নিজেরাই সেন্সরশীপ আরোপ করছেন। তাদের ম্যানেজমেন্ট নিজেরাই করছেন। সরকার বলে বলেই তারা (মিডিয়া) নিজেরাই সেন্সরশীপ করেন- এটা দেয়া যাবেন না, ওটা দেয়া যাবে না, এই খবর ছাপানো যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘আজকে এই যে খবর নিতে আসছেন আপনারা। দেখা যাবে যে, এক কোণায় এইটুকু যাবে, এটাকে গুরুত্ব দেবে না। গুরুত্ব দেবে কাকে? ওবায়দুল কাদের সাহেব কীভাবে গালি-গালাজ করছেন এটাই পাবে গুরুত্ব। এখানেই তাদের ক্রাইমটা সবচেয়ে বড়। আওয়ামী লীগকে আমি দায়ী করি এজন্য যে, ওরা আমাদের সমাজটাকে নষ্ট করে দিয়েছে, আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে। এমন একটা সমাজ তারা তৈরি করেছে যে সমাজে মানুষ হতে পারবে না। আজ তারা যেটা করছে সেটা হচ্ছে, ক্রাইম এগেইনস্ট হিউমিনিটি, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে তারা।’

সংগঠনটির সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, সাবেক ছাত্র নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শফিউল বারী বাবু, মামুন হাসান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, হেল্প সেলের নাসির উদ্দিন শাওন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কেএইচ/এমএসএইচ/পিআর