ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

এখন কেন বিএনপিকে প্রয়োজন, ব্যাখ্যা দিলেন ফখরুল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৫৩ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার কোনো ‘বিদেশি’ বন্ধু পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

ফখরুল বলেন, ‘আজ দুই বছর চলে গেল, দুবার চেষ্টা করেছে; একবারের জন্যও একজন রোহিঙ্গাকে তারা ফেরত পাঠাতে পারেনি। এটা তাদের (সরকার) সম্পূর্ণভাবে কূটনৈতিক ব্যর্থতা, আজ তাদের কোনো বন্ধুও নেই।’

তিনি বলেন, তারা (সরকার) বড় গলায় বলে যে, চীনের সঙ্গে তাদের নাকি বন্ধুত্ব সুউচ্চ পর্বতের মতো, হিমালয়ের পাহাড়ের মতো। ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব আরও বেশি। তাহলে কী হলো? ভারত কী অবস্থান নিয়েছে, চীন কী অবস্থান নিয়েছে? কেনে তাদের এ সরকার বুঝাতে পারছে না, কেন তাদের পথে আনতে পারছে না যে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, সমাজে বোঝা হয়ে গেছে; তাদের নিজ দেশে পাঠানো মানবিক কারণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে- এর কারণও জানান মির্জা ফখরুল। তার দাবি, তাদের (সরকার) হাঁটুতে জোর নেই। নতজানু পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে তারা গোলামি করছে। তারা আজ বাংলাদেশের অধিকারগুলো, বাংলাদেশের স্বার্থগুলো জলাঞ্জলি দিচ্ছে।

‘আমি জানি, আমার এ কথাগুলো তাদের একদম ভালো লাগবে না। ইতোমধ্যে তারা বলতে শুরু করেছে যে, বিএনপি নাকি রোহিঙ্গাদের যেতে বাধা দিচ্ছে। যেটা হয় আর কী, নিজের ব্যর্থতা অন্যের ওপর চাপানো।’

‘১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এবং ১৯৯২ সালে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতিসংঘকে যুক্ত করে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে ফেরত পাঠান’- এমন তথ্য উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘এজন্যই এখন বিএনপির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। এ দল বাংলাদেশের জনগণের দল, তাদের আশা-আকাঙ্খা প্রতিফলনের দল এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সেই নেতৃত্বই দিয়ে এসেছেন। নয় বছর সংগ্রাম করে স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করেছেন দেশকে। তিনি এখনও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য কারাবরণ করেছেন প্রায় ১৮ মাস ধরে।’

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসেঙ্গ ফখরুল বলেন, ‘গতকাল আমি খবর নিয়েছি, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, তিনি এখন হাঁটতে পারেন না। তার ব্লাড প্রেসার, সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। এ অবস্থায়ও তিনি মাথানত করেননি। তিনি বারবার একই কথা বলছেন যে, এ অন্যায়ের বিচার হবে, অন্যায়কারীরা টিকবে না। জনগণ নিশ্চয়ই উঠে দাঁড়াবে এবং জনগণ গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে এবং যারা বন্দি হয়েছেন তাদের ফিরিয়ে আনবে। আমাদের সেই কাজটি করতে হবে।’

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আসুন, আজ আমরা আমাদের মধ্যে ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ভুলে গিয়ে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করি। এখানে কথাগুলো এসেছে যে, জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। দলের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে হবে, দলকে আরও সুসংহত করতে হবে এবং আমাদের জনগণের কাছে চলে যেতে হবে, জনগণের কাছে গিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের এ আন্দোলনে সফল হতে হবে।

‘বিএনপির শক্তি জনগণ’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা বিএনপি, জনগণের দল। সাংবাদিকরা আমাদের জিজ্ঞাসা করেন যে, আপনাদের শক্তি কী? আমাদের শক্তি জনগণ। বিএনপি ইজ দ্য প্লাটফর্ম অব দ্য পিপল, জনগণের প্লাটফর্ম হচ্ছে বিএনপি। জনগণের যে রাজনীতি, তাদের আশা-আকাঙ্খা, সেটাই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। সেটা কী? আমরা আলাদা। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি- এটাই হচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। সেই রাজনীতিকে তুলে ধরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে হবে।

বর্তমান নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন দেয়ারও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘আসুন, আজ আমরা এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শপথ নেই, আমরা বিএনপিকে সুসংহত করব। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় তারেক রহমান সাহেব, তার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে দলকে ইতোমধ্যে সুসংগঠিত করবার কাজ শুরু করেছেন।’

‘আমরা বিশ্বাস করি, অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দল সম্পূর্ণভাবে সংগঠিত হবে এবং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রের বিশ্বাস করে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে অবশ্যই এ দানব, এ ফ্যাসিস্ট সরকার, যারা আমাদের বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদেরকে সরিয়ে জনগণের পার্লামেন্ট, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব। আসুন আমরা শপথ নেই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে, গণতন্ত্রকে মুক্ত করে তবেই আমরা ঘরে ফিরব, তবেই আমরা সমস্ত কাজ করতে সক্ষম হব।’

প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের পরিচালনায় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, অঙ্গসংগঠনের হাবিব-উন নবী খান সোহেল, আহসানউল্লাহ হাসান, সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, মোস্তাফিজুর রহমান, হেলেন জেরিন খান, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, ২০ দলীয় জোট খেলাফত মজলিশের মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের অ্যাডভোকেট এম এ রকীব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা নূর হোসেইন কাসেমী, এলডিডির রেদোয়ান আহমেদ, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার খোন্দকার লুফর রহমান, ডিএলের সাইফুদ্দিন মনি, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন নিজ নিজ দলের পক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিলকিস জাহান শিরিন, মো. আব্দুল আউয়াল খান, শিরিন সুলতানা, আশরাফউদ্দিন নিজান, মোরতাজুল করীম বাদরুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

কেএইচ/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন