‘রুমিন হয়তো শিগগির বিয়েশাদি করবেন, তাই তার একটা প্লট দরকার’
রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাটা প্লট চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা যে চিঠি দিয়েছেন তা প্রকাশ্যে আসার পর থেকে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি তারা। তবে দায়িত্বশীল একজন নেতা বিষয়টিকে ‘যৌক্তিক’ বলে মত দিয়েছেন।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে রুমিনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। প্রতিবেদক পরিচয় দিয়ে খুদেবার্তা (এসএমএস) পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
তবে এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমার প্রশ্ন হলো-আমার চিঠিটা মন্ত্রণালয় থেকে বের হলো কী করে? যেখানে আমার ব্যক্তিগত টেলিফোন নম্বর দেয়া আছে। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আমি এই সরকারের কাছ থেকে এক সুতা জমিও আশা করি না, আমি চিন্তাও করি না। এটা একটা প্রসিডিউর, একটা ফরমালিটিজ যেটা সব এমপি করেছেন, আমিও করেছি।’
তিনি বলেন, ‘এই চিঠি আমি ড্রাফটও করি নাই, আমার পিএস ড্রাফট করে দিয়ে দিয়েছে। সব পিএসরা যখন তাদের এমপিদের চিঠি ড্রাফট করেছে, আমার পিএসও ড্রাফট করে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমার চিঠিটা কেন ভাইরাল হলো? এটা ভাইরাল কেন হলো তার উত্তর আমি নিজেই দিচ্ছি।’
‘গত দু’দিন আগে আবুল মাল আবদুল মুহিত (সাবেক অর্থমন্ত্রী) কোনো পদে না থাকা অবস্থায় শুল্কমুক্ত গাড়ি এনেছিলেন। সরকার তার সেই নোংরামি ও অসততাকে চাপা দেয়ার জন্যে আমার যে বৈধ অ্যাপ্লিকেশন সেটাকে তারা নোংরাভাবে পাবলিশ করেছে। একটা সরকারি নথি পাবলিশ হয় তখন যখন সেখানে সরকারের মদদ থাকে।’
‘আমার প্রশ্ন হলো-আমার চিঠিটা কি অবৈধ? কোন আইনে অবৈধ? এটা কি অনৈতিক কোনো আইনে অনৈতিক? এটা তো রাষ্ট্রীয় চিঠি। আমি তো সরকারের কাছ থেকে কিচ্ছুই চাইনি। আমার বেতনটা যেমন রাষ্ট্রীয়, আমার এই অ্যাপ্লিকেশনও রাষ্ট্রীয়’-যোগ করেন বিএনপির এই নারী এমপি।
রুমিন বলেন, ‘এই সরকার যে অবৈধ এটা এখন বলছি, আগেও বলেছি-এটা সম্পূর্ণ অবৈধ সরকার। এটা জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচিত সরকার। এই সরকার সর্ব অর্থে অবৈধ সরকার। আমি সরকারের কাছে কোনো কিছু চাইনি এবং আমি রাষ্ট্রীয় সুযোগ চেয়েছি। এটা তারা (সরকার) করেছে আবুল মাল আবদুল মহিতকে যে অবৈধ ও অনৈতিক সুবিধা দিয়েছে ওইটাকে চাপা দেয়ার জন্য, জনদৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার জন্য। যাতে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এখন চ্যালেঞ্জ করব-যতজন এমপি অ্যাপ্লিকেশন করেছেন সব প্রকাশ করা হোক। রুমিন কেন একলা?’
বিষয়টি নিয়ে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. মোশাররফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি থেকে নির্বাচিত আরেকজন সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমরা কেউ এ ধরনের আবেদন করিনি। রুমিন যেটা করেছে এটা অন্যায় কিছু করেনি। রুমিন হয়তো শিগগির বিয়েশাদি করবেন, তাই তার একটা প্লট দরকার। কিন্তু সরকার তার চিঠি প্রকাশ করে শুধু বেআইনি কাজই করেনি অমানবিক কাজ করেছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক উইংয়ের একজন সদস্য বলেন, ‘এটা যার যার ব্যক্তিগত এবং নৈতিক বিষয়। এ নিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে না। হয়তো রুমিনের অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হতে পারেন কিন্তু তাতে দলের কিছু হবে না। রুমিনের জায়গায় আমি হলে হয়তো এর চেয়ে বড় ধরনের কোনো লোভের বিষয় থাকলেও সেটা আমি সংবরণ করতে পারতাম।’
দলটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, এই সংসদে বিএনপির যারা গিয়েছেন সরকার তাদের আদরে রাখবে। বর্তমান সংসদ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয় বলেই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথই নেননি।’
তিনি বলেন, ‘রুমিন প্লট হয়তো পাবেন। শুধু প্লট কেন আরও যেসব বিষয়ে অধিকার রয়েছে সেসব কিছুই পাবেন। রুমিনের প্লট চাওয়ার বিষয়ে নেতাকর্মীরা মনে করছে যে, তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে যে বক্তব্য এতদিন দিয়েছেন তা মায়াকান্না ছাড়া কিছু নয়।’
এ বিষয়ে দলের একজন যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা তাদের সেন্টিমেন্ট প্রকাশ করেছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হলে আমি ব্যক্তিগতভাবে নেতাকর্মীদের সেন্টিমেন্টের বিষয়টি তুলে ধরব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘সরকারের কাছে রুমিন ফারহানার ১০ কাঠা প্লট চাওয়ার বিষয়টি তার অধিকার। তিনি সংসদ সদস্য। সংসদের অন্যান্য সদস্যরা প্লটের সুবিধা পেলে তিনি চাইলে দোষ কোথায়?’
রুমিন সংসদে যোগ দিয়ে সংসদকে অবৈধ বলেছেন, সেই প্রেক্ষাপট থেকে তিনি প্লট চাওয়ার অধিকার রাখেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘তিনি বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য, সরকারের সমালোচনা করাই তার কাজ। যেখানে জনগণের ভোটে সরকারের গঠন হয়নি সেখানে সংসদ কীভাবে বৈধ হয়? রুমিন ফারহানা সংসদে কথা বলছেন, সব নিয়মকানুন মেনে চলছেন। সুতরাং, তার থাকার জন্য প্লট চাওয়ার বিষয়টিতে সমালোচনার সুযোগ নেই।’
প্রসঙ্গত, সরকার ও বর্তমান সংসদকে বারবার অবৈধ বলে দাবি করে আলোচনায় আসা বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা তার নামে ঢাকায় ফ্ল্যাট থাকলেও তা গোপন করে সরকারের কাছে ১০ কাঠার প্লট দাবি করেছেন।
রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট চেয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে দেয়া চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ঢাকা শহরে আমার কোনো জায়গা/ফ্ল্যাট/জমি নাই। ওকালতি ছাড়া আমার অন্য আর কোনো ব্যবসা বা পেশা নাই। এ জন্য ঢাকাস্থ পূর্বাচল আবাসিক এলাকায় ১০ কাঠা প্লটের প্রয়োজন।’
কেএইচ/এসআর/পিআর