যে কারণে ১৫ আগস্ট খালেদার জন্মদিন পালনে বিরত বিএনপি
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন উপলক্ষে সাধারণত ১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে বিএনপি নেতাকর্মীরা কেক কেটে উৎসব করলেও গত কয়েক বছর এ কর্মসূচি থেকে বিরত রয়েছেন তারা।
বিগত বছরে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী পালন করায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ২০১৬ সাল থেকে এ দিনটিতে কর্মসূচি পালন থেকে বিরত রয়েছে বিএনপি।
এবার খালেদা জিয়ার ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ আগস্ট কোনো কর্মসূচি নেই তাদের। এমনকি দলের পক্ষ থেকে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন থেকেও বিরত রয়েছে তারা।
তবে খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৬ আগস্ট কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।
অর্থাৎ আগামীকাল শুক্রবার দেশব্যাপী খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এবং বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। উভয় কর্মসূচিতে দলের সিনিয়র নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ নেবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের দিন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী পালন নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে সেটার ইতি টানতেই ১৫ আগস্ট জন্মদিনসহ রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে বিরত রয়েছে বিএনপি।
সূত্র মতে, বিএনপি একটি উদার মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল। যে কারণে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। ২০০১ সালে বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। কিন্তু রাজনীতিতে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনায় কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা রাজনীতির জন্য খুবই ক্ষতিকর।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘ম্যাডামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সারাদেশের সব পর্যায়ের ইউনিটগুলোতে দোয়া মাহফিল পালন করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শুক্রবার ১৬ আগস্ট আমরা এ কর্মসূচি পালন করব।’
১৫ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকী এদিন কর্মসূচি না দিয়ে ১৬ আগস্ট কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদও সেভাবে প্রতিপালিত হয়নি, একদিকে বানভাসি মানুষের আহাজারি, অন্যদিকে ডেঙ্গু গোটা পরিস্থিতিকে দুর্বিষহ করে তুলছে। এ কারণে শুক্রবার বাদ জুমা আমরা দোয়া মাহফিল করব। ম্যাডামের রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং দেশবাসীর জন্য দোয়া করব। এ কারণে আমরা শুক্রবারকে গুরুত্ব দিয়েছি।’
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কারণে কি ১৬ আগস্ট জন্মবার্ষিকী পালন করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নে আউয়াল বলেন, ‘ম্যাডাম যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন শোক দিবস ছিল না। আমার মেয়ের জন্মও ১৫ আগস্ট। আরও অনেকের জন্ম ১৫ আগস্ট। ১৫ আগস্ট ম্যাডামের জন্মবার্ষিকী নিয়ে অনেকের আবেদন আছে যে তাদের আবেগ অনুভূতিতে আঘাত লাগে। আমরা কারও আবেগ অনুভূতিতে আঘাত দেই না। আমরা আমাদের রাজনীতি করি।’
চেয়ারপারসনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দলের কোনো কর্মসূচি নেই কেন- জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, ‘কে বলেছে নেই, আগামীকাল দেশব্যাপী কর্মসূচি রয়েছে।’
১৫ আগস্ট উনার জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়, আজ কেন কর্মসূচি নেই- জবাবে ফারুক বলেন, ‘গত বছর থেকেই তো জন্মবার্ষিকীর পরের দিন কর্মসূচি পালন করা হয়।’
জানতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি দেশের বাইরে ছিলাম। গতকাল (বুধবার) রাতে দেশে ফিরেছি। আপনি অন্য কাউকে ফোন করেন।’
জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘শুক্রবারটাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ কারণে ১৬ আগস্ট দোয়া মাহফিল কর্মসূচি পালন করা হবে।’
বিএনপির ভাষ্য, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট বেগম খালেদা জিয়া জন্মগ্রহণ করেন।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা ঘোষণার দিন থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। সেখানে একটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করেন। তবে গত ২৫ মার্চ আর্থাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগের কারণে তাকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের ৬২১ নম্বর কেবিনে রয়েছেন।
কেএইচ/এনডিএস/পিআর