ইনু চাইলেও তৃণমূল নেতারা চান না জাসদ সরকারের লেজুড়বৃত্তি করুক
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের (ইনু) জেলা ও উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পদকরা চান না জাসদ সরকারের লেজুড়বৃত্তি করুক। এমনকি তৃণমূল নেতারা ১৪ দল থেকেও সরে আসার পক্ষে। এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিত্বের আহ্বান জানালে তা প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানান তৃণমূল নেতারা। তারা বলেন, ‘আমরা না ঘরকা না ঘটকা’।
তারা মনে করেন, একজন মন্ত্রিত্ব পেলে দু-চারজনের লাভ হয় কিন্তু দলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এ অবস্থায় না থেকে বিরোধী দলে থাকা ভালো।
তৃণমূল নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে থেকে কী পেয়েছি আর কী পাইনি তা হিসাব করলেই পাওয়া যাবে। জাসদ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করে। এর আগে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছিল না। গত ১০ বছরে রাষ্ট্র পরিচালনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ফিরিয়ে এনেছি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আল-বদরদের বিচার হয়েছে। জঙ্গিবাদকে আমরা দমন করতে পেরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সরকারে থাকি আর জোটে থাকি জনগণের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে অসুবিধা কোথায়? কেউ কি কোনো দিন আপনাদের বাধা দিয়েছে? তাহলে অসুবিধা কোথায়? যেকোনো ইস্যুতে আপনারা জনগণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মিছিল করবেন, সমাবেশ করবেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আছে তাই আমরা টিকে আছি। চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকলে আপনাদেরতো মুরতাদ (ইসলামত্যাগী) বানাত। নেতাকর্মীদের জীবনে অত্যাচার নির্যাতন নেমে আসত।’
সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চে জেলা, উপজেলা নেতাদের নিয়ে জাসদের প্রতিনিধি সভায় তৃণমূল নেতারা এসব অভিযোগ উত্থাপন করেন। দুই দিনব্যাপী এ প্রতিনিধি সভায় প্রায় ৮ শতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। জেলা ও উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় এই প্রতিনিধি সভায়। যেসব প্রতিনিধি বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন তারা মনের মতো করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সভার শুরুতে গণমাধ্যমকর্মীরা থাকতে পারলেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার সভা শুরু হয়। এ সময় প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তৃণমূল নেতারা বলেন, ‘বিরোধী দলে থাকলে দেশের মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করতে পারতাম। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারে না। রাত ১২টার মধ্যে ভোটের বাক্স ভরাট হয়ে যায়। কৃষক ধানের দাম পায় না, ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে তার প্রতিকার নেই। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট করছে। এসবের কোনো প্রতিবাদ আমরা করতে পারি না। আওয়ামী লীগের নেতারা আমাদের দেখতেও পারে না তাহলে কেন এই সরকারের সঙ্গে থাকা?’
জাসদের কক্সবাজারের প্রতিনিধি নাঈমুল হক চৌধুরী টুটুল তার বক্তব্যের শুরুতে আমরা সারাদেশের কর্মীরা সাংগঠনিকভাবে ভালো আছি? হাত তুলে এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে উপস্থিত সকলে বলে ওঠেন ‘না’।
এরপর তিনি বলেন, ‘তাহলে আমরা সাংগঠনিকভাবে ভালো নেই। আমাদের অবস্থান “না ঘরকা না ঘটকা”। আমরা মন্ত্রিত্বের হালুয়া রুটির ভাগ চাই না। আমরা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চাই। আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দখল, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ সারাদেশে ভোট ডাকাতি ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে চাই। ১৪ দলের থাকার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমরা মনে করি না।’
কুমিল্লার প্রতিনিধি মো. শফিকুর রহমান টুটুলের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘আমরা সরকারের সঙ্গে থাকতে চাই না। এতে সারাদেশে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের মানুষ নানা সমস্যায় আছে। তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চাই।’
গাইবান্ধার প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ রুবেল বলেন, ‘সারাদেশে হত্যা, ধর্ষণ, ভোট ডাকাতি, প্রশাসনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আকাম-কুকাম, দখল, চাঁদাবাজি, কৃষকের ধানের দাম না পাওয়া, গুদামে যুবলীগ, আওয়ামী লীগের ধান সরবরাহসহ এত অরাজকতার পরেও আমরা এ সবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারি না।’
পিরোজপুরের প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম ডালিম বলেন, চারদলীয় জোট সরকার ছিল ভোট ডাকাত। আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে ভোট চোর। ডাকাতের ভয়ে এখন আমরা চোরের সঙ্গে বসবাস করছি। তিনি আরও বলেন, ১৪ দলীয় জোট কথা রাখেনি, নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। আমাদের অবস্থান কী তা পরিষ্কার করতে হবে। এ অবস্থায় থাকার কারণে আমরা সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাচ্ছি।
যশোরের অশোক রায় বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে না থাকলে আমরা ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করতে পারি। আন্দোলন করার মতো অনেক ইস্যু আছে। এতে দলের নেতাকর্মী আরও বাড়বে। সাধারণ মানুষের জন্য কথা বললে তাদের সমর্থন পাওয়া যাবে। এতে জাসদ সারাদেশে আরও শক্তিশালী হবে।’
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা প্রতিনিধি শফিউর রহমান শফিক বলেন, ‘সরকারের লেজুড়বৃত্তি করার কারণে সারাদেশে জাসদের জনপ্রিয়তা কমছে। আমরা কোনো ইস্যুতে মিছিল, মিটিং করলেও মানুষ বিশ্বাস করে না। মানুষ বলে এগুলো লোক দেখানো কর্মকাণ্ড। সারাদেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হলে সরকারের কাছ থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
এফএইচএস/এসআর/এমকেএইচ