এরশাদ বেঁচে থাকবেন ৬৮ হাজার গ্রামে
‘৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে, বাংলাদেশ বাঁচবে’ হুসাইন মুহম্মদ এরশাদের স্লোগান। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলেছেন, এটি ছিল এরশাদের উন্নয়নের স্লোগান। আবার কেউ বলেছেন, এটি নিছক তার রাজনৈতিক স্লোগান ছিল, যা অনেকটাই অন্তঃসারশূন্য।
শাসকেরা বেঁচে থাকেন কর্মে। বেঁচে থাকেন স্লোগানেও। উদ্দেশ্য যাই হোক, ‘৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে, বাংলাদেশ বাঁচবে’ স্লোগানে এরশাদ বেঁচে থাকবেন। এই স্লোগানেই স্মরণ হবে এরশাদের নাম।
বিশেষ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা গ্রহণের পর সেনাশাসকেরা সাধারণত কিছু কৌশল নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে জন-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংহতি রেখে দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকেও সামনে আনতে হয়। এরশাদও তাই করেছিলেন। কখনো ধর্ম, আবার কখনো উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন ক্ষমতা পোক্ত করতে।
অবকাঠামো উন্নয়নে এরশাদ স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, তা হলফ করে বলা যেতেই পারে। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, কালভার্ট নির্মাণে এরশাদের আমলে যে বিশেষ পরিবর্তন এসেছিল, তার সমালোচনা থাকলেও উন্নয়ন বিশ্লেষকদের অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখেন। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা উন্নয়নের মান নিয়েও জনমনে সন্তোষ ছিল। যদিও এসব উন্নয়নের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে বিদেশি দাতাসংস্থাগুলোর খবরদারি বেড়ে যায়।
এরশাদ আমলের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল গ্রামের উন্নয়ন। গ্রামের উন্নয়ন আলোচনায় এনে এরশাদ ‘পল্লীবন্ধু’ উপাধিও পেয়েছিলেন। উপজেলা নির্বাচনের প্রবর্তন করে তিনি মূলত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছিলেন। বিচার ব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে উচ্চ আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ করেছিলেন এরশাদ।
এরশাদের আমলেই গ্রামে গ্রামে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্টসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে। এ সময় স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন ভবনও নির্মাণ হতে দেখা যায়। তিস্তা সেচ প্রকল্প নির্মাণ করে উত্তরবঙ্গের কৃষি উন্নয়নে আকাশসম স্বপ্ন দেখেছিলেন এই এরশাদ।
সামরিক এই প্রশাসকই গ্রামে-গঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের প্রবর্তন করেন। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুতায়নের সংযোগ ঘটে তার আমলেই।
প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে এরশাদ ২১টি জেলাকে ভেঙে ৬৪টি জেলা করেছিলেন। জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করে গণপ্রতিনিধিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন, যার কেন্দ্রে ছিল পল্লীর উন্নয়ন।
পল্লীবন্ধুখ্যাত এরশাদ গ্রামের উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদকে অধিক শক্তিশালী রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন। তার সময়েই ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫ বছর করা হয়।
এএসএস/এসআর/পিআর