ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

স্বৈরাচার এরশাদের পতনে ‘ডা. মিলন হত্যা’

জাগো নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৯

১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর নাগাদ এইচ এম এরশাদ প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন শুরু করেন। ওইদিন তিনি দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ এফ এম আহসানুদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন।

ওই বছরের ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। কমপক্ষে পাঁচজন ছাত্র নিহত ও শতাধিক আহত হন। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রথম বলি হন জয়নাল, কাঞ্চন, মোজাম্মেল, জাফর ও দীপালি সাহা। এরশাদের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সেই প্রথম রক্ত ঝরল ঢাকার রাজপথে। এরপরও অনেক তরুণের রক্ত ঝরেছে।

১৯৮৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর আবিষ্কৃত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের’ তত্ত্ব অন্য দলগুলো গ্রহণ করায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জোরদার হয়। রাজপথে তখন সবচেয়ে জনপ্রিয় স্লোগান ছিল- এক দফা এক দাবি, এরশাদ তুই কবে যাবি।

সব ধরনের আন্দোলন দমন করে রাজনীতিবিদদের একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে কিংবা লেলিয়ে দিয়ে জেনারেল এরশাদ মহাসুখেই রাজত্ব করছিলেন। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো অংশ না নেয়ায় তার পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা আর সম্ভব ছিল না। রাজনীতিবিদরা অনেকেই এরশাদের কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন, অনেকেই মন্ত্রিত্ব করেছেন, কেউ কেউ নিয়মিত মাসোহারা পেতেন বলেও সেসময় কানাঘুষা হতো।

ওই সময় ‘তিন জোটের রূপরেখা’ নিয়ে অনেক কথাবার্তা শোনা যায়। তিন জোটের মধ্যে ছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫-দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বে সাতদলীয় জোট এবং বামপন্থীদের পাঁচদলীয় জোট। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীও ‘যুগপৎ’ আন্দোলনে শামিল।

১৯৮৬ সালে একটা পাতানো সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হয় এবং আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের সেই নির্বাচনে ভিড়িয়ে এরশাদ ভেবেছিলেন, তিনি বুঝি টিকে গেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক মাত্র এক বছর টিকেছিল।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বিভিন্ন সময় ছন্দপতন হয়। কিন্তু ১৯৮৭ সালে একটি মিছিলে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনা আন্দোলনে গতি এনে দেয়। ক্ষমতার শেষের দিকে আবারও সামরিক আইন জারি করে এরশাদ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু ডা. মিলন নিহত হওয়ার পর পরিস্থিতির দ্রুত পাল্টে যায়।

১৯৯০ সালের অক্টোবর মাস থেকে ছাত্র সংগঠনগুলোর ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের’ ব্যানারে আন্দোলনে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এদিকে ক্যাম্পাস দখলের পরিকল্পনা নেয় এরশাদের লালিত বহিরাগত মাস্তানরা। তারাই পরিকল্পিতভাবে ডা. মিলনকে হত্যা করে।

১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন সরকারের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হন। এটা ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। মিলন যখন রিকশায় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ডা. মিলনের সঙ্গে একই রিকশায় ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের তখনকার মহাসচিব ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন পরবর্তীতে এক গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, আমার রিকশাটা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় উপস্থিত হয়েছে তখন মিলন আরেকটি রিকশায় করে আমাকে ক্রস করে সামনে চলে যাচ্ছিল। তখন আমি মিলনকে বললাম তুমি ওই রিকশা ছেড়ে আমার রিকশায় আসো। এরপর মিলন আমার রিকশায় এসে ডানদিকে বসল। রিকশাওয়ালা ঠিকমতো একটা প্যাডেলও দিতে পারে নাই, মনে হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে থেকে গুলি আসল। গুলিটা মিলনের বুকের পাশে লাগে। তখন মিলন বলল, জালাল ভাই কী হইছে দেখেন। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সে আমার কোলে ঢলে পড়ে।

ডা. মিলনকে হত্যার পর জেনারেল এরশাদবিরোধী আন্দোলন আরও তুঙ্গে ওঠে। তখন জনগণের ক্ষোভের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে শুরু করে সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে জেনারেল এরশাদের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের প্রক্রিয়াও শুরু করে সেনাবাহিনী। একপর্যায়ে কমান্ডিং অফিসাররা সরকারের ‘অপকর্মের’ দায়িত্ব নিতে আর রাজি হলেন না।

৬ ডিসেম্বর জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ওই সময় আন্দোলনকারী দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে তিন মাস মেয়াদের একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এরশাদ। সর্বসম্মতিক্রমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান করা হয় তখনকার প্রধান বিচারপতি মো. সাহাবুদ্দিন আহমদকে।

এমএআর/বিএ/পিআর