ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

শেষ জীবন কেটেছে চরম নিঃসঙ্গতায়

আমানউল্লাহ আমান | প্রকাশিত: ১০:৩৩ এএম, ১৪ জুলাই ২০১৯

সামরিক বাহিনীতে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ষাটের দশকে। মেজর থেকে পদোন্নতি পেয়ে একসময় স্বাধীন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান সামরিক প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালেই প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল। দীর্ঘ ৯ বছর বাংলাদেশ পরিচালনা করেন।

ব্যাপক গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর। এরপর কারাভোগ কিন্তু কখনও ক্ষমতার বাইরে থাকতে হয়নি। তবে শেষ জীবন কেটেছে বড় একাকী ও নিঃসঙ্গতায়।

রাজধানীর বারিধারার বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্ক অথবা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল সিএমএইচে নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি, বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।

তার শেষজীবনের সার্বিক চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে সাবেক স্ত্রী বিদিশা উল্লেখ করেছেন, অত্যন্ত দুঃখের সহিত বলতে হচ্ছে, যে মানুষটিকে ঘিরে তার পরিবার, তার রাজনৈতিক দলীয় সদস্যরা যে সুবিধাটুকু নিয়েছেন, তার এই দুঃসময়ে, তার পাশে থাকার মতো কেউ ছিল না। এখন তার সকাল-সন্ধ্যা একাকীত্বভাবে কেটে যাচ্ছে। জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন দলীয় মতামতের ওপর ভিত্তি করে এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করে। আজ জীবন-সায়াহ্নে তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য, তার পাশে তার দলীয় নেতাকর্মীরাও নেই। এমনকি তার পরিবারের কোনো সদস্যও নেই।

তিনি আরও বলেন, অসুস্থ সময়ে হয়তো-বা তিনি মনে মনে ভাবেন, আজ আমার পাশে যদি পরিবারের কোনো সদস্য থাকত তাহলে হয়তো বা তাদের কাছে জীবনের সুখ-দুঃখ, জীবনের শেষ সময়ের কিছু কথা তাদের কাছে বলতে পারতেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, অসুস্থতার এ রকম একপর্যায়ে তাকে নিয়ে গেছে যে, এখন তাকে তার বিছানাতে প্রয়োজনীয় কাজ-কর্মগুলো সারাতে হচ্ছে। পাশে তার বিশ্বস্ত কয়েকজন গৃহকর্মী ছাড়া আর কেউ বলার মতো নেই। যে মানুষটিকে ব্যবহার করে মানুষ ক্ষমতার উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন তারাই আজ তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

এরশাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার পর থেকে হাঁটাচলাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। অধিকাংশ সময় বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে থাকলেও সময়-অসময়ে চলে যেতেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। সেখানে একটি ক্যাবিনে থেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতেন তিনি। ওষুধ খাওয়ার দরকার হলে সিএমএইচে গিয়েই খেয়ে আসতেন। সিএমএইচের চিকিৎসকরা নিজ হাতেই ওষুধ খাইয়ে দিতেন সাবেক এ সেনা প্রধানকে।

ঘনিষ্ঠ ওই সূত্রটি জানায়, ছোট মাছ, দেশি মুরগি ইত্যাদি খেতে পছন্দ করতেন। তবে দীর্ঘদিন সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকায় খাবার খাওয়ার বিষয়ে বেশ সচেতন ছিলেন এরশাদ। তবে অসুস্থ হওয়ার পর সব খাবার খেলেও তার পরিমাণ ছিল একেবারেই পরিমিত। চিকিৎসকরা বেশি পরিমাণে খাবার খেতে বললেও তিনি পরিমাণের চেয়েও কম খাবার খেতেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে মনোনীত হন। জোটগতভাবে নির্বাচন করে ২২টি আসনে জয়ী হয় জাতীয় পার্টি।

গত ৬ জানুয়ারি হুইল চেয়ারে করে সংসদে এসে শপথগ্রহণ করেন রংপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এইচ এম এরশাদ। ১০ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সংসদে যোগ দিতে আসেন হুইল চেয়ারে বসেই। ১০ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা গ্রহণ করেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি। দেশে ফিরে রংপুরে সফর করেন তিনি। চলতি বছরের ২০ মার্চ ৯০তম জন্মদিন উদযাপন করেন জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।

গত ২৬ জুন অসুস্থ বোধ করায় সিএমএইচ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেয়া হয় এরশাদকে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১৪ জুলাই) সকাল পৌনে ৮টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এইচ এম এরশাদ।

এইউএ/এমএআর/এএইচ/জেআইএম/বিএ