আ.লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণিল আলোয় সেজেছে দেশ
ঢাকা মহানগরী থেকে শুরু করে দেশের জেলা উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বর্ণিল আলোয় সাজানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে নিজ দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা ও উপজেলা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দলের নির্দেশ অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহরের সড়কগুলো সাজানো হয়েছে রকমারি ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও প্ল্যাকার্ড দিয়ে। এগুলোতে দলের গুরুত্বপূর্ণ স্লোগান, আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন বড় বড় অর্জনের কথা স্থান পেয়েছে। ১৯৪৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। যেমন- সমুদ্র বিজয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, পদ্মা রেলসেতু সংযোগ, শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময়, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার গুনদুম রেলপথ, মেট্টোরেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর, এল এনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পগুলোর নাম গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরা হয়েছে।
যে কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেই কার্যালয় ঢাকার রোজ গার্ডেনকে রঙিন করে সাজানো হয়েছে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ জানান, এখানে রঙিন আলোর ঝলকানির পাশাপাশি সীমিত আকারে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কিছু কর্মসূচিও পালন করা হবে। এছাড়া ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পুরো রাজধানী বর্ণিল সাজে সাজছে।
প্রতিষ্ঠার স্মৃতিবিজড়িত রোজ গার্ডেন হয়ে নবাবপুর, নবাবপুর থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও পুরো রাজধানী ঐতিহ্যের আলোয় সাজানো করা হয়েছে। শনিবারও রাজধানীর আর কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭০তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী রঙিন এবং উৎসবময় করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করবে। রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় বেলুন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়ানো হবে।
২৫ জুন ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ, রফিকুল ইসলামসহ দেশের বরেণ্য ও জনপ্রিয় শিল্পীরা এতে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি স্বাধীনতা ও দেশের গান থাকবে এই আয়োজনে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে মাসব্যাপী কর্মসূচিও। আলোচনা সভা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রচার ও পুস্তিকা প্রকাশ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ থাকছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়।
দলটির নেতারা জানান, কেন্দ্রের পাশাপাশি সমানতালে তৃণমূলেও পালিত হবে আওয়ামী লীগের এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই উপলক্ষে ইতোমধ্যে তৃণমূলে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তূণমূলে পাঠানো ওই নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা এবং ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আলাদা কর্মসূচি পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা ও এর পাশের জেলা নেতাদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একাধিক যৌথসভা করেছে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। একইভাবে সহযোগী সংগঠনগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করা হয়েছে। এসব বৈঠকে সাড়ম্বরে, আনন্দ-উৎসবের সঙ্গে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার না করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলা থেকে দুজন করে প্রবীণ নেতাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, পুরান ঢাকার ঋষিকেশ দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’। পরে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে এর নাম করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নাম দেয়া হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’। রোজ গার্ডেন থেকে দলীয় কার্যালয় কয়েকটি জায়গায় বদল হয়। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দলের সভাপতি হয়ে দেশে ফেরার পর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় করায় হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে। ২০১৮ সালে ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সেখানে দলের ১০তলা কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ধানমন্ডি ৩/এ আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয় এবং সিটি কলেজ থেকে মোহাম্মদপুরগামী রোডটাও আলোকসজ্জা সজ্জিত করা হয়েছে।
এফএইচএস/এমএসএইচ