আমুর বক্তব্যের প্রতিবাদ জাসদের
একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)।
শনিবার দলটির দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাইয়ুম স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর সাক্ষাৎকারে জাতীয় বীর বাঙালি জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক কাজী আরেফ আহমেদকে ‘অচেনা কাজী আরেফ’ বলে কটাক্ষ করায় তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
এতে বলা হয়, যাদের ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল অবস্থান নেই তাদের কাছে কাজী আরেফ অচেনা। আজকের প্রধানমন্ত্রী ৬০ দশকে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের অন্যতম নেত্রী ও ৬৬-৬৭ শিক্ষাবর্ষে ইডেন কলেজ ছাত্রী সংসদের নির্বাচিত ভিপি শেখ হাসিনা খুব ভাল করেই কাজী আরেফকে চিনতেন, তার ভূমিকা সম্পর্কে জানতেন। তাই ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কাজী আরেফকে হত্যার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার কফিনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সেই সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা কবরস্থানে সমাধিস্থ করার নির্দেশ দেন।
প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, কাজী আরেফ আহমেদ ১৯৬০ সালে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সে বছরই তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করলে এ সময় ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি কাজী আরেফ সর্বপ্রথম ৬ দফার সমর্থনে ঢাকায় মিছিল বের করেন। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য ছিলেন।
এতে আরও বলা হয়, বিএলএফ/মুজিব বাহিনীর দক্ষিণ অঞ্চলীয় কমান্ডের ব্যারাকপুরের হেড কোয়ার্টার থেকে অধিনায়ক তোফায়েল আহমেদ, উপ অধিনায়ক নুর আলম জিকুর সঙ্গে মিলে হাজার হাজার গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে পরিচালনা করেছেন কাজী আরেফ। এছাড়া চার অঞ্চলের অধিনায়ক ও উপ অধিনায়কদের সঙ্গে সমন্বয় করেছেন। স্বাধীকার-স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধে প্রকাশ্যে সামনের কাতারে দাঁড়িয়ে তিনি বীরত্বপূর্ণ দুঃসাহসিক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন।
৬০ দশকের ছাত্রলীগের হাতেগোনা গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার মধ্যে অন্যতম কাজী আরেফকে অচেনা বলা বা না চেনার ভান করা সেই সময়ে কোনো ছাত্রলীগ নেতা বা কর্মীর জ্ঞানপাপ ও মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। আর সত্যি সত্যি না চিনে থাকলে বলতে হয়, তিনি আর যাই হোক, মন দিয়ে ওই সময় ছাত্রলীগ করেননি বা ছাত্রলীগে থাকলেও মনে মনে পাকিস্তানপন্থী ছিলেন, যার কাছে শুধু কাজী আরেফ আহমেদই নয় পুরো ছাত্রলীগই অচেনা ছিল বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
আরও বলা হয়, কাজী আরেফ বাংলাদেশের রাজনীতির আকাশে চির উজ্জ্বল ধ্রুবতারা। বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে তার কিংবদন্তীতুল্য অবদান অস্বীকার করা মানেই জাতির সবচাইতে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকেই অস্বীকার করা। এতো কিছু জানার পরও তার সমসাময়িককালের একজন রাজনীতিক কর্তৃক তার প্রতি কটাক্ষ অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ধরনের নিম্ন রুচি ও ইতিহাসকে অস্বীকার করার অপচেষ্টা স্বাধীনতা বিরোধীদের খুশি করবে মাত্র।
এইউএ/এমএসএইচ