উচ্চাভিলাষী বাজেটে চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ
আওয়ামী লীগের তৃতীয় মেয়াদের সরকারের প্রস্তাবিত প্রথম বাজেট ‘উচ্চাভিলাষী’ অভিহিত করে বিএনপি বলেছে, এতে সাধারণ মানুষ চাপে পড়বে, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য বাড়বে। প্রস্তাবিত বাজেট জন-প্রত্যাশা পূরণ করবে না।
শুক্রবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘এই বাজেটে সাধারণ মানুষের ওপর সরাসরি চাপ পড়বে, তাদের (সাধারণ মানুষ) প্রকৃত আয় কমে গেছে, বৈষম্য বাড়ছে। ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ভুগছে মধ্য-নিম্নবিত্তরা। তাদের ওপর করের চাপ আরও বেড়ে যাবে। সামগ্রিকভাবে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর অর্থনৈতিক চাপ বাড়বে, মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। কারণ জনগণের বিরুদ্ধে এই বাজেট দেয়া হয়েছে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলোর কথা উঠে আসেনি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাদের যে প্রধান সমস্যাগুলা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-স্বাস্থ্য-তার কোনোটাই সমাধান হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এক কথায় এই বাজেট জন-প্রত্যাশা পূরণ করবে না, তারা (জনগণ) নিবার্চনের মতোই এই বাজেটও গ্রহণ করবে না।’
সংক্ষিপ্তভাবে বাজেটের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আপনি বাজেটের চিত্র দেখেন, তুলনামূলকভাবে বরাদ্ধ কমে যাচ্ছে। কল্যাণ রাষ্ট্রের নীতি বিসর্জন দিয়ে সরকার বাজেট প্রণয়নে নীতিগর্হিতভাবে অরাজকতার আশ্রয় নিয়েছে। তারা দেশকে ঋণনির্ভর বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছে।’
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দকৃত ব্যয়ের গুণগতমান, মেগা প্রকল্পের ব্যয় ‘অস্বাভাবিক’ বৃদ্ধি, জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা, বেকারত্ব, কর্মসংস্থান, সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয়ে নিয়ে বাজেটে যেসব বক্তব্য দেয়া হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ফখরুল।
ঘাটতি বাজেটের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে সুদ-আসল পরিশোধ করতেই বাজেটে বিশাল ব্যয় হচ্ছে। ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ সরকারি চাকরিতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি, গণহারে পদোন্নতির মাধ্যমে বেতনকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এই অর্থবছরে বেতন-ভাতার জন্য রাজস্ব আয়ের ২০ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। যা কোনো অবস্থাতে যুক্তিযুক্ত বলা যাবে না।’
ঋণ বিষয়ে সময়সীমা পরিবর্তনের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সম্প্রতি ঋণ হিসাবের সময়সীমায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাঁচ বছরের স্থলে তিন বছরের মাথায় ব্যালেন্স শিট থেকে ঋণ অবলোপন করা হবে। এ এক অদ্ভূত ব্যাপার। এর মানে হলো অ্যাকাউন্টিং ট্রিপমেন্ট দিয়ে দ্রুত ঋণ সাফ করে দেয়া যাবে। ব্যালেন্স শিট আরও আকর্ষণীয় হবে। এটা জনগণকে গোঁজামিল দেয়া যা মোটেও কাম্য নয়। আসলে বিরাটাকার খেলাপি ঋণ জনগণের দৃষ্টির আড়াল করার জন্য এমন ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।’
সাধারণ মানুষের মোবাইল ও সিমের ওপর কর বৃদ্ধির সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘বাজেটে একদিকে স্বর্ণের দাম কমানো হয়েছে যা কিনা সমাজের সুবিধাভোগী একটা শ্রেণি ব্যবহার করে। অথচ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ।। সেই মোবাইল, সিম ও সার্ভিসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে বাজেটে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘বাজেটে সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সিগারেটের ওপর শুল্ক না বাড়ায় সিগারেট কোম্পানির ৩১% আয় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ সারা বিশ্বে সিগারেট নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। এটা এক শুভংকরের ফাঁকি।’
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন। টাকার অংকে এটা বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।
বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল শুরুতেই তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, অনির্বাচিত’ এই সরকারের বাজেট দেয়ার নৈতিক অধিকার নেই।
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একমাত্র অনির্বাচিত সরকারে রয়েছে বাংলাদেশ। এরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ নয়।’
বাজেট প্রতিক্রিয়া অনুষ্ঠানে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের কভার পেজ তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘এখানে বাজেটে প্রকৃত চিত্র উঠেছে। ডেইলি স্টারকে ধন্যবাদ জানাই।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এসআর/এমকেএইচ