খালেদা জিয়াকে ‘শিষ্টাচার’ শেখান, ফখরুলকে তথ্যমন্ত্রী
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ‘শিষ্টাচার’ শেখানোর জন্য দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পরামর্শ দিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে মির্জা ফখরুল ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বলায় এই মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফর নিয়ে রোববার (৯ জুন) গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নাম নিতেও ঘৃণা লাগে। তিনি আরও বলেন, আজ হোক কাল হোক একদিন না একদিন তার (তারেক রহমান) শাস্তি কার্যকর হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে নিয়ে করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি একে প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ’ বলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, এই বক্তব্য ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’।
মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শিষ্টাচার তো বিএনপির কাছ থেকে আমাদের শিখতে হবে না। মির্জা ফথরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে বলব, তার নেত্রীকে শিষ্টাচার শেখানোর জন্য। তিনি এমন একটি দলের মহাসচিব যে দলের চেয়ারপারসন...কোকো মারা যাওয়ার পর দেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুয়ারের সামনে গিয়ে ১৫-২০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া দরজা খোলেননি। কোনো শত্রুও যদি সহমর্মিতা জানানোর জন্য কারো বাড়িতে হাজির হয় আমাদের সামাজিক আচার হচ্ছে তার জন্য দরজাটা খুলে দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে ছিলেন। টেলিফোনে যে ভাষায় বেগম খালেদা জিয়া কথা বলেছেন, সেটি সব শিষ্টাচারবহির্ভূত ছিল। তাই আমি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তার নেত্রীকে শিষ্টাচার শেখানোর জন্য বলব।’
‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল যেটি বলেছেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব হচ্ছে কোনো শাস্তিপ্রাপ্ত আসামির শাস্তি কার্যকর করা। এটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তারেক রহমান দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। তারেক রহমানের শাস্তি কার্যকর করা হচ্ছে রাষ্ট্রের দায়িত্ব, দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি সেই কথাই বলেছেন’ বলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক।
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির রাজনৈতিক দৈন্যদশা এই পর্যায়ে গেছে যে, হত্যাকাণ্ডের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, দুর্নীতির দায়ে ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আসাামি তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন। এটি তাদের জন্য প্রচণ্ড লজ্জাকর, রাজনৈতিক দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ।’
ফখরুলের বক্তব্যের সমালোচনা করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শিষ্টাচারের কথা বলে মির্জা ফখরুল মহাসচিবের পদটি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন তিনি দায়িত্ববোধ থেকেই বলেছেন। নিশ্চয়ই তারেক রহমানের এই শাস্তি একদিন কার্যকর হবে।’
ঐক্যফ্রন্ট ঐক্য সুদৃঢ় করতে আজ সোমবার ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বৈঠকে বসছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের অবস্থা দেখে আমার হাসি পায়, আবার করুণাও হয়। তারা বারবার বলে আসছিলেন, বৃহত্তর ঐক্য, জাতীয় ঐক্য, আর ফ্রন্টের নাম ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টেই ঐক্য নেই, ঐক্য ধরে রাখার জন্য তারা আজ মিটিং ডেকেছেন।’
ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন, যারা নিজের ঐক্য ধরে রাখতে পারেন না, নিজেদের ঐক্য ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘ঐক্য ধরে রাখার জন্য বৈঠক করতে হচ্ছে। তাদের যে আন্দোলনের ঘোষণা, সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার ঘোষণা- এগুলো সব হাস্যকর। আজকের বৈঠকের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে ঐক্য নেই সেটি আরও স্পষ্ট করে দেখালেন।’
বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা শপথ নিয়ে বলেছেন, ‘এই সংসদ অবৈধ’। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এই কথার মাধ্যমে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা নিজেকে অবৈধ বলেছেন। শপথ নিয়ে বলছেন, এই সংসদ অবৈধ। এর মানে এই সংসদের সংসদ সদস্য হিসেবে তিনিও অবৈধ। এটিতে হাসব, নাকি কিছু বলব বুঝে উঠতে পারছি না। তাদের বক্তব্যে সব সময় দ্বৈততা।’
আরএমএম/এসআর/এমএস