বেতন নিয়ে পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিক উদ্বিগ্ন
সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুনাফা অর্জনকারী পোশাক শিল্পে কাজ করেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। তবে চাকরি করে ‘তৃপ্ত’ এমন কর্মীর সংখ্যা নগণ্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
তারা বলেন, মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে বরাবরই শ্রমিকরা অসন্তোষ জানিয়ে আসছেন। প্রতি বছরই রোজা ও ঈদুল ফিতরের আগে অনিবার্য চিত্র থাকে- রাজপথে বেতন-বোনাসের দাবিতে শ্রমিক আন্দোলন। এ বিষয়ে সরকার ও তৈরি পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ ওয়াকিবহাল থাকলেও বিদ্যমান নৈরাজ্য ও সংকট রোধ করা যাচ্ছে না।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় এসব কথা বলেন। তারা বলেন, সরকার, শ্রমিক, মালিক সবাই চায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত গার্মেন্ট শিল্পে কোনো কারণে যেন অসন্তোষ দেখা না দেয়। শৃঙ্খলা রক্ষায় ও নির্বিঘ্নে উৎপাদন করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সরকার ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের নেতাদের কোনো উদ্যোগ ও মনোবাঞ্ছাকে যে ব্যবসায়ীরা থোড়াই কেয়ার করেন তা পরিস্ফুট হতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে।
নেতৃদ্বয় বলেন, দেশে সবচেয়ে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন গার্মেন্ট মালিকরা। কিন্তু শ্রমিকদের পাওনার কথা এলে তারাই সবচেয়ে বিত্তহীন হয়ে যান। অথচ মালিকরা ঈদ উপলক্ষে কানাডা-আমেরিকা-মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান কেনাকাটা ও ঈদ উদযাপনের জন্য। ২৫ রোজার মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধ করা না হলে ঈদের আগে শ্রমিকদের অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়া হবে।
আরও পড়ুন> পাঁচ মাস ধরে বেতন না পেয়ে কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ
সংকট নিরসনে সরকারি সংস্থাগুলোর নির্বিকার ভূমিকার সমালোচনা করে নেতৃদ্বয় বলেন, এখনও যেসব কারখানায় শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের পরিশোধের আলামত মিলছে না, সেগুলোর কোনো কোনোটি বিস্ফোরক অবস্থা রয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে যদি আবার শ্রমিক আন্দোলন দানা বাঁধে, তাহলে ঘরমুখী মানুষসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই ভোগান্তিতে পড়বে।
তারা বলেন, শ্রমিকের নীরব ও সরব কান্নার বিপরীতে পোশাক শিল্পে অস্থিরতার আশঙ্কা ও তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনে ঈদের আগে অনেক কারখানায় বেতন-বোনাস না হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। ইতোমধ্যে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পোশাক শ্রমিক সংগঠনগুলো। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। প্রতি বছরই কতিপয় পোশাক মালিক ঈদের সময় বেতন-ভাতা দিতে গড়িমসি করেন। মওকা বুঝে শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য উসকানি দিতে পারে অশুভ শক্তিগুলো। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এ শিল্পে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। অর্থ সংকটে ছোট ও মাঝারি আকারের পোশাক মালিকদের সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পারার ঘটনাকে অন্যদিকে প্রবাহিত করতে পারে অশুভ চক্র।
এদিকে আপদকালীন জরুরি বিবেচনা এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পাটকল শ্রমিকদের জন্য ১৬৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে ন্যাপ চেয়ারম্যান-মহাসচিব বলেন, এ বরাদ্দ দেয়ার খবরে খুশি হয়েছেন শ্রমিক ও নেতারা। তারা আশা করেন, এটা যেন শুধু কথার কথা নয়। একই সঙ্গে তারা প্রত্যাশা করেন সরকার মজুরি কমিশনসহ বাকি ৮ দফা দাবিও পূরণ করে পাটকল ও পাটকল শ্রমিকদের রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখবেন।
কেএইচ/এমএসএইচ/পিআর