সিপিবি নেতা আবু জাফরের মৃত্যুতে ন্যাপের শোক
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
রাতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক শোকবার্তায় নেতৃদ্বয় সৈয়দ আবু জাফর আহমেদের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলেন, বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি, জাতীয় রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তার অবদান জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনির রোগে ভুগছিলেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার মাধ্যমে। তিনি মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মনুবার্তা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন।
সিলেটের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কৃতি ব্যক্তিত্বদের মধ্যে সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ অন্যতম। তিনি ১৯৫৪ সালের ১১ জুলাই মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সৈয়দ মনোয়ার আলী এবং মা সৈয়দা আমিরুন্নেসা খাতুন।
তিনি ১৯৬৯ সালে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর ঢাকা সিটি ল কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি উচ্চতর পড়াশোনার জন্য ১৯৭৯ সালে জার্মানি যান।
ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি সিলেটের বিভিন্ন পেশাজীবী-সামাজিক-সাংস্কৃতিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে উভয় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সিলেটে চা শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯৭২ সালে তিনি প্রথম কারাবরণ করেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার অব্যবহিত পরই আবার ১৯৭৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ফের তিনি গ্রেফতার হন এবং বিনাবিচারে দীর্ঘ এক বছর জেলজীবন কাটান। এছাড়া এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সমান সক্রিয়। গণতন্ত্রের ওই উত্তাল আন্দোলন-সংগ্রামে তার সোচ্চার ভূমিকার জন্য তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার-নির্যাতনের শিকার হন।
তিনি বিভিন্ন পেশাজীবী আন্দোলনেও শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন। ক্ষেতমজুর আন্দোলনে তার অগ্রণী ভূমিকার কারণে ক্ষেতমজুর সমিতির সাংগঠনিক রাজনীতির শুরুর দিকেই তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রগতিশীল রাজনীতির পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনেও তার ছিল সমান বিচরণ। ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। গণমানুষের মুক্তি ও চেতনাগত পরিবর্তনে তিনি সশরীরে রাজপথে যেমন সক্রিয়, তেমনই সক্রিয় তার কলম। বৃত্তবন্দি অপরাজনীতির ধারাভাষ্যসহ আর্থ-সামাজিক ইস্যুতে তিনি দীর্ঘদিন ধরে কলম চালিয়েছেন।
কেএইচ/বিএ