বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে সিরাজ
বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন বিএনপি নেতারা। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে থেকে অন্তত ৪/৫ জন দলীয় মনোনয়ন পেতে নীরবে দৌড়ঝাঁপ করছেন। এক্ষেত্রে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এগিয়ে রয়েছেন। আগামী দু'একদিনে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, বগুড়া-৬ আসন থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সাধারণত প্রার্থী হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কারাবন্দী থাকায় সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেয়ায় আসনটি শূন্য ঘোষণা করে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে উপ-নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপির ইতিবাচক মনোভাব ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তবে তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষের প্রার্থী হবে না বলে দলটির হাইকমান্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন বলে খবর প্রকাশ হয়েছে।
এমনই পরিস্থিতিতে বগুড়া-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বগুড়া পৌর মেয়র একেএম মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন এবং সদ্য গঠিত বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ।
আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পেতে লন্ডনে নীরবে জোর লবিং করছেন তারা। কিন্তু এ বিষয়ে দায়িত্বশীল নেতারা কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন বগুড়া-৬ আসন নিয়ে তাদের দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্যের মতে, বগুড়া-৬ আসনে স্থানীয়দের মধ্যে থেকে কেউ প্রাধান্য পাবেন। জাতীয় পর্যায়ের কোনো নেতার ওই আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ নেই।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দলের ৪ জন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন, আর মহাসচিব নিলেন না, এটা একটা কৌশলগত বিষয়। সে কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্য বা কেন্দ্রীয় সিনিয়র কাউকে এ আসনে প্রার্থী করার সুযোগ নেই। সিনিয়র কেউ যদি এখানে প্রার্থী হবেন তাহলে তো মহাসচিবই শপথ নিতে পারতেন।
বিএনপির অপর এক সিনিয়র নেতা বলেন, এবারের মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় প্রধানত দুটি বিষয় বিবেচ্য হওয়া উচিত। প্রথমত হচ্ছে সংগঠন, দ্বিতীয় হচ্ছে সংসদ।
তিনি বলেন, সংসদে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে, জনবান্ধব আইন প্রণয়নে উদ্ভাবনী সক্ষমতা রয়েছে এমন কেউ। এখন কথা হচ্ছে, এই সংসদকে দল কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমান সংসদকে গুরুত্ব দেয়া হলে নিশ্চয়ই মহাসচিবই শপথ নিতেন। অর্থাৎ বর্তমান সংসদকে দল গুরুত্ব দিচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে সংগঠনকেই প্রাধান্য দিতে হবে। বগুড়া নিঃসন্দেহে বিএনপির ঘাঁটি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় অন্য দলের নেতারা এখানে থেকে এমপি হয়েছেন। যার কারণে আমাদের দলের নেতারা পদে পদে জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী বিএনপির পুনর্গঠন কাজ চলছে। বগুড়ায় কয়েকদিন আগে নতুন জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ। অর্থাৎ বগুড়া বিএনপির ভবিষ্যত এখন তার কাঁধে তুলে দেয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই হাইকমান্ড এসব বিবেচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। সেক্ষেত্রে সংগঠন ধরে রাখতে হলে সিরাজই বগুড়া-৬ আসনে বিবেচ্য হবেন।
এদিকে এ বিষয়ে জানতে গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলতে চাননি।
তিনি বলেন, আগামী দু'এক দিনের মধ্যেই এ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত হবে বলে আমরা জেনেছি।
কেএইচ/এমএমজেড/জেআইএম