‘নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে বিএনপির দৈন্যদশা’
নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে বিএনপির দৈন্যদশা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সোমবার (২০ মে) সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির নেতৃত্ব খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হাতে নেই। তাই দীর্ঘদিন ধরে দলটি ভাড়া করা নেতা দিয়ে চলছে। নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে দলটির এ দৈন্যদশা হয়েছে।
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের দায়িত্ব নিতে চান গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি ইতিপূর্বেও ধার করা নেতা দিয়ে চলেছে। ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে প্রকৃতপক্ষে বিএনপি জোটের নেতৃত্বে ড. কামাল হোসেন সাহেবদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। সেটি এখনও বহাল আছে। বিএনপি এখন নতুন করে আবার নেতৃত্ব ভাড়া করবে কি-না সেটি বিএনপিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত অন্য কেউ দিতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপি ইতিপূর্বেও নেতা ভাড়া করেছে। কারণ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে ঐক্যফ্রন্ট সেই ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বে বিএনপি আছে। প্রকৃতপক্ষে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের হাতে এখন বিএনপির নেতৃত্ব নেই। তারেক রহমান যাবজ্জীবন শাস্তিপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। দেশের বাইরে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেয়া সহজ নয়। সেই কারণে বিএনপির বহু সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত ছিল না।
তিনি বলেন, বিএনপির নানাবিধ ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিএনপির আজকের এই দৈন্যদশা তাদের ক্রমাগত ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। প্রথমত, তারা গত নির্বাচন অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও করেনি। নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর যেভাবে তৎপর থাকার কথা ছিল, তাদের কোনো প্রার্থীই তেমন তৎপরতা ছিল না। এছাড়া মনোনয়ন বাণিজ্য তো আছেই। তবে মনোনয়ন বাণিজ্য এখানে নয়, লন্ডনে হয়েছে। এখানে যেগুলো হয়েছে সেগুলোও লন্ডন পর্যন্ত গেছে।
বিএনপি রাজনৈতিক দৈন্যদশায় পৌঁছেছে বলেই অন্য দলের নেতারা তাদের জন্য ভাড়ায় যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
খালেদার মুখে ‘ঘা’ হওয়া প্রমঙ্গে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির নেতারা বলছেন- বেগম খালেদা জিয়া হঠাৎ কামড় লেগে জিহ্বায় ঘা হয়ে স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছে না। আমি বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের (বিএসএমএমইউ) সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন- খালেদার জিহ্বায় ঘা হয়েছে। সে কারণে তিনি স্বাভাবিক খাবার খেতে পারছিলেন না, তবে এখন অনেকটা ভালো হয়ে গেছে। দু-একদিনের মধ্যে তিনি পরিপূর্ণভাবে ভালো হয়ে যাবেন, স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করতে পারবেন। খালেদার অসতর্কতাবশত জিহ্বায় কামড় লেগেছে, একটা অনেকেরই হয়, জিহ্বায় কামড় লেগে ঘা হয়। কিন্তু এটি এমন কোনো রোগ নয় যে, একেবারে জীবন শঙ্কা, যেভাবে বিএনপি নেতারা বলছেন- কামড় লেগে ঘা হয়েছে, বেঁচে থাকার জন্য ‘ঝাউ’ খাচ্ছে- এভাবে উপস্থাপন করা অপরাজনীতি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া আদালত কর্তৃক শাস্তিপ্রাপ্ত। বছরের পর বছর ধরে তার আইজীবীরা আদালতকে বার বার তারিখ পরিবর্তন করে হ্যারেস করেছে। মামলার ক্ষেত্রে এত সময় নেয়ার ঘটনা ইতিপূর্বে ঘটেনি। স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ায় তার বিচার হয়েছে। বিচারের মাধ্যমে তার শাস্তি হয়েছে। আইনকে প্রভাবিত করার সুযোগ নেই। এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি মন্ত্রী বলেন, রূপপুরের অনিয়মের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে, তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে রফতানির বাড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, চাল আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে রফতানির বাড়ানোর ব্যাপারে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। এটি কার্যকর হলে ধানের দাম বাড়বে বলেও আশার কথা শোনান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। আমাদের খাদ্য শস্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। তিনগুণের বেশি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আমাদের খাদ্য উদ্বৃত্ত্ব থাকে। এজন্য বর্তমান সরকারকে বিএনপির ধন্যবাদ দেয়া উচিত। তারা ধানের দাম বাড়ানোর কথা বলতে পারতো। কিন্তু তা না করে তারা উল্টাপাল্টা কথা বলছে।
তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে ধানের দামের বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে। শিগগিরই চাল রফতনি করা হবে। পাশাপাশি চাল আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হবে। এটি কার্যকর হলে ধানের দাম বাড়বে কৃষকরাও উপকৃত হবে।
গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, কৃষকদের সুরক্ষায় দেশে চাল আমদানি সীমিত করা হবে এবং ভর্তুকি দিয়ে হলেও চাল রফতানি করা হবে।
এমইউএইচ/এমবিআর/জেআইএম