তারেকের সিদ্ধান্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতাদের অসন্তোষ!
বিএনপি থেকে নির্বাচিত চারজনের এমপি হিসেবে শপথগ্রহণে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। বিষয়টি নিয়ে আবার কেউ কেউ সমর্থনও জানিয়েছেন।
সোমবার বিএনপির নির্বাচিত চারজন শপথ নেয়ার পর সন্ধ্যায় গুলশানে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তারপাশে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ দলের কোনো পর্যায়ের নেতাকে দেখা যায়নি। সংবাদ সম্মেলনস্থলে সাংবাদিকদের কাতারে বসাছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের একমাত্র সদস্য শায়রুল কবীর খান।
মির্জা ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির নেতারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দিয়েছেন। তারেক রহমানের সিদ্ধান্তে নির্বাচিতরা শপথ নিয়েছেন।
গত রোববার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমানকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়- গণমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সোমবার বিকেলে এ সংবাদের প্রতিবাদ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। এই ধরনের সংবাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ক্ষমতাসীনদের মদদে তৈরি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার জাগো নিউজকে বলেছেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে নেতারা শপথ নিয়েছেন কি না এটা জানি না।
তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত উকিল আব্দুস সাত্তার ভূইয়া শপথ গ্রহণ করায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিতি করেছেন।
কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মেজর অব. আখতারুজ্জামান। এ নিয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘শত্রুর ধ্বংস কামনা করছি। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হতে পারতো নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিয়ে চুপচাপ থাকা এবং যথাসময় সংসদে যোগদান করা। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা এবং সংসদে না যাওয়া। কিন্তু আজ ১২০ দিনের মাথায় বিএনপি তার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ পরিবর্তন করে নির্বাচনের ফলাফল মেনে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় হঠকারিতা হলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশের দোয়াই দিয়ে চারজন সংসদ সদস্য শপথ নিল কিন্তু দলের মহাসচিব সেই নির্দেশ মেনে এখন পর্যন্ত শপথ নেন নাই! বিষয়টি অনেক ঘোলাটে মনে হচ্ছে!!’
তিনি তার পোস্টে আরও উল্লেখ করেছেন, ‘সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যজনক হলো আজকে দেশমাতার তথাকথিত মুক্তির কথা বলে বিএনপির সংসদে যাওয়ার কথা বলছে। যদি সত্যি তাই হয়ে থাকে তাহলে জনগণ মনে করে দেশমাতা খালেদার জিয়ার এই অসম্মানজনক তথাকথিত মুক্তির চেয়ে জেলখানায় মরে যাওয়া লক্ষ কোটি বেশি সম্মানজনক ও গ্রহণযোগ্য হতো। জনগণ সরকারের সঙ্গে আপসরফায় খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় না। যারা মনে করছে বা ভাবছে সরকারের সঙ্গে আপসরফা করে দেশমাতা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবে তারা শুধু দল ও জাতির শত্রু নয় তারা খোদ খালেদা জিয়ার শত্রু। জনগণ এই শত্রুদের ধ্বংস কামনা করছে।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা খোন্দকার আকবর হোসেন তার পোস্টে লিখেছেন, ‘জাতি এখন শোনার অপেক্ষায় আছে ...‘আমাদের ও আমাদের পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জোর করে তুলে নিয়ে শপথ করিয়েছে’ ও বিনোদন হিসেবে পাবেন গ্লিসারিন দিয়ে কান্নার নাটক!’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন যে একজনই ছিলেন এবং এ দলে যে আর তার মতো নেতা আর সহসাই জন্ম নেবে না, তা আবারও প্রমাণিত হলো। নিজের ও পরিবারের ওপর প্রচণ্ড চাপ, ভয়ভীতি, প্রলোভন, সকল বিপদকে উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের মধ্যরাতের বিএনপি ভাঙার ষড়যন্ত্র কীভাবে তিনি মোকাবেলা করেছিলেন তা আজ বড় নেতারা ভুলে গেলেও তৃণমূল নেতাকর্মীরা কখনোই ভুলে যাবে না।’
নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ার সিদ্ধান্ত তৃণমূল নেতারা কীভাবে দেখছে? জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘এটা পার্টিপ্রধান হিসেবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত বা নির্দেশে যারা পার্লামেন্টে গিয়েছেন বা শপথ নিয়েছেন এটা মহাসচিব প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন। আমার সাথে মহাসচিবের কথা হয় নাই। পার্টি যখন সিদ্ধান্ত দিয়েছে ভালোমন্দ বিচার করেই দিয়েছে। সেই হিসেবে পার্টির একজন সহকর্মী হিসেবে এ বিষয়টাতে আমার সমর্থন থাকে।’
কেএইচ/বিএ