ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

বিএনপিকে আর প্রতিপক্ষ ভাবছে না আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ১০:০১ এএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

মাঠের রাজনীতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে (বিএনপি) আর প্রতিপক্ষ মনে করছে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপি’র জনভিত্তি থাকলেও আওয়ামী লীগ মনে করছে, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই মুহূর্তে সরকারের অবস্থান পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না দলটি।

সিদ্ধান্তহীনতার রাজনীতি, দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড (তারেক রহমান) দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকা, সর্বোচ্চ নেতাসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মামলার জালে আটকে পড়া, কয়েক দফা আন্দোলন করে ফলাফল না পাওয়া, সরকার পতন আন্দোলনে ভারতের সমর্থন না পাওয়া, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ধারাবাহিক কারাবরণ আর তৃণমূল নেতাদের মাঝে হতাশা কাজ করায় বিএনপির রাজনীতি এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রলে মনে করা হচ্ছে। সরকারের কৌশল আর উপর্যুপরি চাপে বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ায় আওয়ামী লীগ যেন স্বস্তিতে (চাপমুক্ত) রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ হয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে বিএনপি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে নিজেরাই এখন কোণঠাসা। মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার না করলে রাজনীতিতে কেউ আর গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বিএনপি পরিবর্তনের রাজনীতি না করলে, এমনিতেই ছিটকে পড়বে।’

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর রাজনীতির পট পরিবর্তন হলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বিশেষ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় আসে। এরপর তিনি সামরিক শাসন ব্যবস্থাকে রাজনীতিকরণ করতে ১৯৭৭ সালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) গঠন করেন। পরের বছর ১৯৭৮ সালে পহেলা সেপ্টম্বর বাংলাদেশে জাতীয়তবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। ১৯৮১ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলে দলটি রাজনীতিতে বড় ধরনের হোঁচট খায়। স্বৈরশাসক এরশাদের সামরিক শাসনামলের এক দশক ধকল সামলে ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় আসে বিএনপি।

খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তিনবার ক্ষমতায় এলেও এই মুহূর্তে দলটি সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়ার পরেই দলের মধ্যে বিপর্যয় নেমে আসে। ভাঙণের পাশাপাশি ওই সময় দুর্নীতির অভিযোগে দলের চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যানসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই গ্রেফতার হন।

বিশেষ মুচলেকা দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা তারেক রহমান, যিনি আজও দেশে ফিরতে পারেননি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টানা আন্দোলন করলেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে ক্ষমতায় আসা ঠেকাতে পারেনি বিএনপি। চলতি বছরের শুরু থেকে সরকার পতনের টানা ৯২ দিন আন্দোলন করেও কোনো ফলাফল পায়নি দলটি।

বরং আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ব্যর্থ আন্দোলনের ফলাফল ওঠে সরকারের ঘরে।

আন্দোলনকে ঘিরে সরকারের কৌশল এবং পুলিশের মারমুখি অবস্থানে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে বেশ।

দীর্ঘ আন্দোলনে শত শত নেতাকর্মী আহত হয়, যাদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এ সময় সরকরের পক্ষ থেকে দেয়া শত শত মামলায় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। মামলা গ্রেফতার আতঙ্কে নাজেহাল বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জোটের অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামিরও বিএনপি থেকে প্রায় মুখ ফেরানো অবস্থা।

এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনে সরকার পতন দূরের কথা, রাজনীতিতে টিকে থাকাই এখন বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবকে মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘বারবার ভুল করে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায় না। অনেক ঐতিহ্যবাহী সংগঠন রাজনীতি থেকে বিলীন হয়ে গেছে নিজেদের ভুলের কারণে। সত্তর বা আশির দশকের রাজনীতি এখন অচল। আশির দশকের রাজনীতি এই উপমহাদেশে আর চলবে না। কিন্তু বিএনপি এখনও তা অনুধাবন করতে পারেনি।’

প্রবীণ এই রাজনীতিক আরো বলেন, ‘বিএনপির সিদ্ধান্ত কে নেয়, এটি নেতাকর্মীরা জানে না। গায়েবি সিদ্ধান্ত দিয়ে একটি সংগঠন মূল ধারার রাজনীতিতে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না। নিজেদের ভুলের কারণেই বিএনপি এখন বিলীনের পথে।’

এএসএস/এসএইচএস/পিআর