তুরস্কের এরদোগানের মতো করে ফিরতে চায় জামায়াত
বাংলাদেশে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীকে নিবীর্য করা গেলেও রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা যায়নি। তারা মিসরের মুরসি অথবা তুরস্কের এরদোগানে ফিরে আসতে চায়।
সেই সময়টা জামায়াতকে সামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রাখতে চায়। সেটা সময়ের ব্যাপার। ইতোমধ্যে তার জায়গা নিতে চাচ্ছে ‘মোল্লাতন্ত্র’, যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক হেফাজত। কওমী সনদের স্বীকৃতি দিয়ে বিষবৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে কি না- সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
রোববার (৩ মার্চ) সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া সংসদে সভাপতিত্ব করেন।
আল্লামা শফী ও হেফাজতে ইসলামসহ কওমী আলেমদের ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তেঁতুল হুজুরের আবদারে পাঠ্যপুস্তকে কুসুমকুমারীর ‘আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে’ কবিতাসহ রবীন্দ্রনাথ-দ্বিজেন্দ্রনাথ সবাই নির্বাসিত হন। মনে হয়, আমরা খাজা শাহাবুদ্দিনের যুগে ফিরে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, তেঁতুল হুজুরের দল প্রধানমন্ত্রীকে কওমী জননী উপাধি দিয়েছেন। তাদের শিক্ষার মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমরা বিষবৃক্ষ রোপণ করছি কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, জামায়াতকে নিবার্য করা গেলেও রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা যায়নি। তারা মিসরের মুরসি অথবা তুরস্কের এরদোগনে ফিরে আসতে চায়। সেই সময়টা জামায়াতকে সামাজিক কর্মকাণ্ড যেমন- স্কুল, কলেজ, পাঠাগার প্রতিষ্ঠা, স্বাস্থ্য সেবা দেয়া এ ধরনের কাজে লিপ্ত রাখতে চায়।
মেনন বলেন, দেশের মধ্যে চরম পশ্চাৎপদ ভাবনা ছড়ায়, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টিতে তারা লিপ্ত রয়েছে। হিন্দুদের ওপর অত্যাচার আক্রমণ তো সাধারণ ব্যাপার। এখন তাবলিগ জামাতে বিভাজন সৃষ্টি, আহমদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা, তাদের ওপর আক্রমণ- মোল্লাতন্ত্রের এ ধরনের পাকিস্তানি অনুকরণ রাষ্ট্রপতি যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা তার ভাষণে উল্লেখ করেছেন- সেটাকে চরম বিপদে ফেলেছে।
তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতাটি সব ক্ষেত্রে সুখকর নয়। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে আসলেও নির্বাচনকে ভন্ডুল করা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার কৌশলই প্রয়োগ করেছে। তারেক রহমানের নির্বাচন বাণিজ্যের কারণে তারা নির্বাচনে কার্যকর প্রার্থী দেয়নি। নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেয়নি। কেন্দ্র পাহাড়া দূরের কথা, পোলিং এজেন্টও দেয়নি।
১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, এখন তারা বিভিন্ন অনিয়মের কথা বলছে, কিন্তু কোনো প্রমাণ উত্থাপন করতে পারছে না। ভোটের অনিয়ম নিয়ে তাদের গণশুনানীতে প্রার্থী ও দলীয় ব্যক্তি বাদে কোনো জনগণই উপস্থিত ছিল না।
তিনি বলেন, এ ধরনের একটা পরিস্থিতিতে অতি উৎসাহী প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বাড়াবাড়ি করতে পারে। কিন্তু তাতে এই নির্বাচন অশুদ্ধ বা অবৈধ হয়ে যায় না। তাই বলে আত্মতৃপ্তির অবকাশ নাই। বরং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দল অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের যে আন্দোলন করে আমরা যে সফলতা অর্জন করেছিলাম তা যেন এখানে হারিয়ে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।
মেনন বলেন, স্থানীয় সব নির্বাচনে জনগণ সাগ্রহে অংশগ্রহণ করে থাকে। কিন্তু সংসদ সদস্যসহ দলীয় নেতারা ‘ভোট তো দেখেছ, তোমরা ভোট দিয়ে কি করবে’ এ ধরনের প্রচার হুমকি-ধামকি করেন তখন সামগ্রিক নির্বাচন সম্পর্কে জনগণের অনাস্থার জন্ম হয়। ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে প্রার্থী হতে বাধা দান, মনোনয়নপত্র ছিড়ে ফেলা, ঊর্ধ্বমহলের ক্লিয়ারেন্স আছে কি না প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের এ ধরনের প্রশ্ন, সন্ত্রাস, টাকা ছড়ানো -এসব উদ্বেগজনক খবর আছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৪ দলের শরীকদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। সবার মতই তার জন্য প্রয়োজন গণতান্ত্রিক স্পেস। এবার ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রতিরোধের হাতিয়ার দুর্নীতি দমন আইনকে সংশোধন করে দুদকে কিছুটা হলেও নিবীর্য করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দুদক প্রাইমারি শিক্ষকের অন্যায় আমলে নিলেও বেসিক ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারির কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অনেকে প্রয়োজনের তাগিদে দুর্নীতি করে। সেটা যেমন গ্রহণযোগ্য নয়, আর লোক থেকে যে দুর্নীতি তাকেও কঠোর হাতে দমন করতে হবে।
এইচএস/আরএস/জেআইএম