জিয়ার নাম পুনঃস্থাপনে বিএনপির আল্টিমেটাম
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের’ নামফলক থেকে মুছে ফেলা জিয়ার নাম পুনঃস্থাপনে পাঁচদিনের সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি।
মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে নগরীর নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন এ আল্টিমেটাম ঘোষণা করেন।
শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে’ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাবের পর জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নামফলকে কালি লাগিয়ে জিয়ার নাম মুছে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। এই জাদুঘর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। আমরা ইতোমধ্যে জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে ম্যুরালের কাপড় সরিয়ে ফেলা এবং নামফলকের কালি মুছে জিয়ার নাম পুনঃস্থাপনের জন্য ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছি। অন্যথায় ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা আন্দোলনে নামব।’
আন্দোলনে কী ধরনের হতে এ সময় তিনি তাও জানান। দুই দিনের দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন।
‘ভোট ডাকাতির নির্বাচন’ থেকে দৃষ্টি সরাতে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তোলা হয়েছে দাবি করে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব তোলার পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্রফোরাম নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী জিয়া জাদুঘরের নামফলক থেকে প্রকাশ্যে শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলে। তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর ছবি সংবলিত ব্যানার টাঙিয়ে দেয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যিনি নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছেন, তিনি চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমরা তার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তার তত্ত্বাবধানেই সব ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
এ ঘটনার জন্য দায়ীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে শাহাদাত বলেন, ‘একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঢুকে যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে, আমরা তাদের দুষ্কৃতিকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। জাদুঘর কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া। আমরা পুলিশকে অনুরোধ করছি- যারা এই কাজ করেছে তাদের ছবি আছে, পত্রিকায় নাম আছে। ছবি ও নাম দেখে তাদের গ্রেফতার করুন।’
নগরের বিপ্লব উদ্যানে জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলার প্রতিবাদ জানিয়ে ডা. শাহাদাত বলেন, ‘এই স্থান থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে জিয়াউর রহমান তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টে বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন। এটা ভেঙে ফেলার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে- তারা মুক্তিযুদ্ধের লেবাসধারী। আওয়ামী লীগ নেতারা মুখে শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেন। আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করেন না। তাদের চরিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীরপ্রতীক।
প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তরের প্রস্তাব তোলেন।
জেডএ/এমএস