শঙ্কিত সরকার : কৌশলী বিএনপি
প্রতি বছর সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে পবিত্র ওমরা পালন করতে গেলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ বছর যাননি। চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাবেন এমন পরিকল্পনা করলেও এখনো যাওয়া হয়নি তার।
এদিকে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করার পরও না যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জনের কথা শোনা যাচ্ছে। বিদেশ সফরের বিষয়টিকে কৌশল হিসেবে মনে করছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার বলছেন, রাজনৈতিক কারণেই তিনি দেশের বাহিরে যাবেন কিনা, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন।
তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এবারের বিদেশ সফরের বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা সমালোচনা হয়। তার (খালেদার) সফর নিয়ে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া ষড়যন্ত্র করার জন্য দেশের বাহিরে যাচ্ছেন।’ খালেদার সফর নিয়ে মন্ত্রীদের এমন বক্তব্য সরকারের মধ্যকার অস্থিরতা প্রমাণ করছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
বিএনপি’র মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন ব্যক্তিগত কারণে লন্ডনে যাওয়ার চিন্তা করছেন। ম্যাডামের বিদেশ সফর নিয়ে সরকার অযথা অস্থিরতা প্রকাশ করছে। সরকার ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে আছে, বিধায় সব কিছুতেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজে পায়।’
অন্যদিকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যার (খালেদার) রাজনীতি ভুলে ভরা, সে দেশের বাইরে গিয়ে কোনো সুবিধা করতে পারবে না।’
জানা গেছে, চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডন সফরে যাওয়ার কথা বলা হলেও বড় ছেলে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধু, নাতি-নাতনিসহ নিকতাত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল খালেদা জিয়ার। এমনকি তিনি তারেক রহমানের বাসায় উঠবেন বলেও গুঞ্জন উঠেছিল।
পাশাপাশি রাজনৈতিক বেশ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করারও পরিকল্পনা ছিল খালেদা জিয়ার। গুলশান কার্যালয়ে নিজের ৭০তম জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারে তার দৃঢ়তার কথা বললেও চূড়ান্তভাবে তিনি লন্ডন যাচ্ছেন না বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে রমজান মাসে ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ হয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। অবশেষে সৌদি সফর বাতিল করেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক ও তদারক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে দেশ ত্যাগ করছেন না খালেদা জিয়া।
অন্যদিকে ফিরে আসার বিষয়ে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাতেও দেশ ত্যাগ করা উচিত হবে কিনা এটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। এজন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ অব্যহত রেখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দলটির আরেকটি সূত্র জানায়, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারাদেশের জেলা উপজেলাসহ বিভিন্ন ইউনিটে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে খালেদা জিয়া। এ বিষয়টি তিনি সরাসরি মনিটরিং করছেন। তাই আপাতত দেশের বাহিরে না যাওয়ার চিন্তা করছেন।
অবশ্য বিএনপি চেয়ারপারসনের বিদেশ সফরের বিষয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা ব্যক্তিগত বিষয় বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম তথা স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি ম্যাডামের একান্ত ব্যক্তিগত। বিষয়টি নিয়ে কোনো কিছুই তিনি অবগত নন।’
অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতা খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম মনে বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার বিদেশ সফর নিয়ে নিজেই ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছেন। তার সফর নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যাথা নেই। ভুল রাজনীতি করে তিনি সব হারিয়েছেন। তাকে মনে রাখতে হবে, এদেশে আর আশির দশকের রাজনীতি চলবে না। রাজনীতি করতে হলে তাকে পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আসতে হবে।
এএসএস/এমএম/একে/আরআইপি