অনড় গণফোরাম, উভয় সংকটে ঐক্যফ্রন্ট
নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার কারণে একদিকে যেমন সংসদে না যেতে চাপ দিচ্ছে বিএনপি, অন্যদিকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য গণফোরামের নেতাকর্মীরা চাপ দিচ্ছে। বিএনপি সংসদে না যাওয়াকে আন্দোলনের অংশ মনে করছে। সংসদে গিয়ে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্তকে আন্দোলন বলছে গণফোরাম। সরকারের বিরুদ্ধে গঠিত সবচেয়ে বড় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বর্তমানে উভয় সংকটে পড়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সংসদে না যাওয়ার জন্য জোটের অন্যতম বৃহৎ শরিক দল বিএনপি চাপাচাপি করছে। একইভাবে সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ জানুয়ারি শুরু হওয়া জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের আগে গণফোরামের নির্বাচিত দুই এমপি সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানকে শপথ নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে ঐক্যফ্রন্ট। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে প্রয়োজনে সংসদ থেকে পদত্যাগ করবেন তারা।
৫ জানুয়ারি রাজধানীর একটি মিলনায়তনে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দলটির সভাপতি ড. কামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীসহ শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভার মূল পর্বে সাংবাদিক প্রবেশের অনুমতি ছিল না।
সেখানে উপস্থিত গণফোরামের এক শীর্ষ নেতা জাগো নিউজকে বলেন, বর্ধিত সভায় এমপিদের শপথ ও সংসদে যাওয়ার বিষয়ে মতামত নেয়া হলে সব নেতা সংসদে যাওয়ার পক্ষে রায় দেন। কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম গণফোরামের প্রতিনিধি হিসেবে কেউ সংসদে যাবে।
রোববার মৌলভীবাজার-২ আসনের এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর জাগো নিউজকে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকাসহ সারাদেশের অনেক নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই সময়ে আমি একজন মানুষও পাইনি যে, শপথের বিপক্ষে। যেহেতু জনগণের জন্য রাজনীতি করি সেহেতু জনগণের মতামতকে মূল্য দিতে হবে।
তবে সুলতান মনসুরের এই সিদ্ধান্তকে একান্তই ব্যক্তিগত বললেন গণফোরামের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। সোমবার তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত শপথ না নেয়ার। ঐক্যফ্রন্টও শপথ না নেয়ার পক্ষে। এটা তাদের ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে।’
তারা যদি শপথ নেয় সেক্ষেত্রে গণফোরাম কিংবা ঐক্যফ্রন্ট কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা এখন বলতে পারব না। কখন কী হয় তা দেখে বলা যাবে।’
তবে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, যদি এই দুইজন শপথ নেন তাহলে গণফোরাম থেকে তাদের বহিষ্কার করার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী ৩০ জানুয়ারি গণফোরামের একটি সভা রয়েছে, সেখানে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর লতিফুল বারী হামিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যারা নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছে সবাই শপথ নেবেন। তবে কখন নেবে সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন, কারণ ৯০ দিনতো সময় আছে। ৩০ তারিখ (জানুয়ারি) সংসদে যাওয়া নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও টেম্পারিং (অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করা) করা হচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, সবাই শপথ নেবে। তবে গণফোরাম সংসদে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক, তবে ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিলেই তারা যাবে। দলগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কিছু বিষয় রয়েছে, রাজনীতিক পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে হবে।’
জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার মাঝে ২৯ জানুয়ারি অর্থাৎ মাত্র একদিন বাকি থাকলেও ড. কামাল হোসেন দেশে না ফেরায় সোমবার বিকেল পর্যন্ত শপথ নেয়ার বিষয়ে ঐক্যফ্রন্ট কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
তবে এদিন দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী ব্যক্তিগতভাবে শপথ গ্রহণ করবে কিনা এমন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে এখনও বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধ আছে। যেকোনো বিষয়ে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন নেতারা।’
এর আগেও বিএনপির সঙ্গে সংসদে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে মতবিরোধ হয়েছিল ঐক্যফ্রন্টের। ৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন গণফোরামের নির্বাচিত দুই এমপির শপথ নেয়ার বিষয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের অবস্থান ইতিবাচক’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে পরদিন ‘ইতিবাচক মানে শপথ নিচ্ছেন এমন কথা নয়’ বলে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠায় গণফোরাম।
৩০ ডিসেম্বর আয়োজিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২৮৮ আসনে জয় পায়। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পায় ৮টি আসন। নির্বাচনের দিন রাতেই ভোট ডাকাতির ও ব্যালট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত প্রার্থীরা শপথগ্রহণ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তাদের সংসদ সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। ওইসব আসনে উপ-নির্বাচন দেয়া হবে।
এআর/জেএইচ/এমকেএইচ