মেয়র পদে দৌড়ে এগিয়ে আতিকুল
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন বিজেএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম। দলটির হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন বিতরণের প্রথম দিনেই ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেন তিনজন। তারা হলেন- বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আদম তমিজি হক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রীড়া সমিতির মহাসচিব মেজর (অব.) মো. ইয়াদ আলী ফকির।
মনোনয়ন ফরম কেনার পর আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি এই সিটির নেতাকর্মীসহ সব মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। সব মহলে নিজেকে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। আশা করি, নেত্রী তার আগের সিদ্ধান্তই বহাল রাখবেন।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা বলেন, অতীতের পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল, আগের তফসিলে যিনি দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তিনিই শেষ পর্যন্ত নৌকার কান্ডারী ছিলেন। ঢাকা উত্তর সিটির ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আতিকুল ইসলামের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ওই নেতা আরও বলেন, অতীতে দেখা গিয়েছিল নির্বাচন স্থগিত হওয়ার তিন চার মাসের মধ্যেই পুনরায় নির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু উত্তর সিটির উপ-নির্বাচন স্থগিত হয়েছে একবছর আগে। এরই মধ্যে অনেকগুলো বড় ঘটনাও ঘটেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বারের মতো দল ক্ষমতায় রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভিন্ন বিবেচনায়ও থাকতে পারে। যদি ব্যতিক্রম কোনো কিছু না ঘটে তাহলে আতিকুলই পুনরায় মনোনয়ন পাবেন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরশনে নতুনভাবে যুক্ত হওয়া ওয়ার্ড নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে পৃথক এক বিজ্ঞপ্তিতে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন-এর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি প্যানেল তৈরির জন্য ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্যদের নিয়ে সভা করবে। সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কমপক্ষে ৩ জনের একটি প্যানেল সুপারিশ করবে। প্যানেলটি মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ স্বাক্ষরে প্রার্থীদের যোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণাবলি ও জনপ্রিয়তা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে কমপক্ষে তিন জনের সুপারিশ আওয়ামী লীগ সভাপতি কার্যালয়ে ২৫ জানুয়ারির (শুক্রবার) মধ্যে প্রেরণ করতে হবে। সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে (৩টি ওয়ার্ড নিয়ে একটি সংরক্ষিত নারী আসন) উল্লিখিত নিয়মাবলি প্রযোজ্য।
দলীয় নির্দেশনার পরেই কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। তারা বলেন, অনেকেই নির্বাচন করতে চান। কিন্তু আমরা যাচাই-বাছাই করে যাদের সমর্থন দিলে দল সংগঠিত হবে, নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করা যাবে তাদের নামই দলীয় সভাপতির অফিসে জমা দিবো। আমরা দলীয়ভাবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করতে আগ্রহীদের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই সুপারিশ পাঠাবো।
আগামীকাল (২৬ জানুয়ারি) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আজ বিকেল ৫টার মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন।
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, আমাদের সাংগঠনিক সব ইউনিটগুলো জাতীয় নির্বাচনের মহাবিজয়ের পরে উজ্জীবিত। উত্তর সিটি নির্বাচনের জন্যও আমাদের নেতাকর্মীরা মুখিয়ে রয়েছেন। প্রার্থী বাছাইয়ে দলীয় হাইকমান্ড একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ঘোষণা বাকি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, এ নিয়ে আমাদের মনোনয়ন বোর্ড যথা সময়ে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। আগেই বলার কিছু নেই। তবে যোগ্যতম প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেয়া হবে এই তিলোত্তমা ঢাকার উন্নয়নের জন্যে। প্রার্থী যেই হোক না কেন, উন্নয়নের জন্য হলেও মানুষ নৌকায় ভোট দেবে।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে। একইসঙ্গে দুই সিটি কর্পোরেশনে নতুন করে যুক্ত হওয়ায় ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডেরও সাধারণ নির্বাচন হবে।
এইউএ/জেএইচ/পিআর