নির্বাচনের পর সরকার বিরোধী নেতাদের হয়রানি করছে : রিজভী
নির্বাচনের পর সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘দেশজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানি ও মামলা-হামলার পর দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে আবারো মামলা দায়ের করেছে দুদক।’
রিজভী আহমেদ বলেন, ‘মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে এখন কেন টানাহেঁচড়া শুরু করেছে? নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচনে দুইজনই প্রার্থী ছিলেন। অনেক হামলা হয়েছে তাদের ওপর। এর মধ্যেও তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন-এটাই হচ্ছে তাদের অপরাধ। অপরাধ তাদের তারা মুক্তকণ্ঠে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেন। তারা যদি নিশ্চুপ থাকতেন তাহলে তাদের ওপর দুদকের খড়গ নেমে আসত না। আমরা বলতে চাই, দুদক বিরোধীদলকে নির্যাতন করার জন্য যাঁতাকল হিসেবে কাজ করছে।’ এ সময় অবিলম্বে মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
বিএনপির এই নেতার অভিযোগ, গত ১০ বছরে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা লাখ লাখ কোটি টাকা লুট করে নিলেও সব ব্যাংক লুট হয়ে গেলেও দুদক চোখ বন্ধ করে বসে আছে। গণমাধ্যমে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে সাগর চুরির খবর প্রকাশিত হলেও, খোদ সংসদে দাঁড়িয়ে সরকারের মন্ত্রীরা সাগর চুরির কথা বললেও দুদক একেবারে পাথরের মূর্তির মতো চুপচাপ বসে থেকেছে।
খালেদার জামিন নিয়ে টালবাহানা
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বারবার সরকার বাধাগ্রস্ত করছে। যে মিথ্যা মামলায় ইতোপূর্বে অনেককেই জামিন পেয়েছেন অথচ সেই মামলাগুলোতেই আদালতকে ব্যবহার করে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্বিত করা হচ্ছে।’
বিএনপির এই নেতার ভাষ্য, ‘কুমিল্লার মিথ্যা নাশকতার মামলায় বারবার তারিখ পিছিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আদালতে ন্যায়বিচার পেলে কুমিল্লায় দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় বিচারিক আদালতে বেগম খালেদা জিয়া জামিন পেতেন। নিম্ন আদালত জামিনও দিচ্ছে না আবার জামিন নামঞ্জুরও করছে না। ফলে দেশনেত্রীর উচ্চ আদালতের যাওয়ার পথও রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সরকারের নির্দেশেই নিম্ন আদালত বেগম জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে বলে দেশবাসী মনে করে।’
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী কর্তৃক সারাদেশে বিএনপি ও বিরোধীদলের প্রার্থীদের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরে নির্বাচনী সহিংসতার বিবরণ তুলে ধরেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনোত্তর সহিংস সন্ত্রাসের প্রকোপে জনজীবন গভীর শঙ্কা ও উদ্বেগের মধ্যে পতিত হয়েছে। বিরামহীন সন্ত্রাসের প্রসারে দেশজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অবৈধ শাসনের শৃঙ্খল থেকে মানুষের মুক্তির আশা দুরাশায় পরিণত হয়েছে। নিপীড়ন-অত্যাচারের সংবাদ যাতে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা না হয় সেজন্য ভয়ঙ্কর সেন্সরশিপ চালানো হচ্ছে।’
সাবেক এই ছাত্রনেতার অভিযোগ, নির্বাচনের পর ঢাকা-হাতিয়া ও ঢাকা-চরফ্যাশন নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযান এমভি তাসরিফ-১, ২, ৩, ৪ লঞ্চের ভেতরে বিএনপিসমর্থিত ক্যান্টিন, পান ও চায়ের দোকানগুলোতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের ক্যাডাররা স্থানীয় কমিশনারের নেতৃত্বে গায়ের জোরে দখল করে নিয়েছে। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তা দখলমুক্ত করার দাবি জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। আগামী উপজেলা নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণের ব্যাপারে নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান তিনি।
বিএনপি নিজেদের কারণে নির্বাচনে হেরেছে- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জনগণের সঙ্গে নিষ্ঠুর রসিকতা করছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, আহমেদ আজম খান, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, রবিউল ইসলাম রবি, আমিনুল ইসলাম, শাহজাহান মিয়া সম্রাট প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
কেএইচ/এসআর/এমকেএইচ