ভোট উৎসব বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তারেক
নির্বাচন বানচালের জন্য নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টার পেছনে তারেক রহমানের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবীর নানক। তিনি বলেছেন, ‘দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ও একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি তারেক রহমান ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নাশকতার নির্দেশনা দিয়েছে।’
শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে এক যৌথ সভা শেষে দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন নানক।
তিনি বলেন, ‘তারেকের বক্তৃতায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টের পরিকল্পনা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা সংঘবদ্ধভাবে গেরিলা কায়দায় ভোট কেন্দ্র দখলের হুমকি দিয়েছে।’
নানক বলেন, ‘একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট উৎসবকে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বিএনপি। পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ব্যাপক সহিংসতা ও অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব রটিয়ে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির চক্রান্ত চালাচ্ছে। ভুয়া ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ও নকল বুথ বানিয়ে সিল মারা নকল ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর নীলনকশা করছে তারা।’
সেনাবাহিনীকে নিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে নানক বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে লাগাতার মিথ্যাচার চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন সংবিধান ও আইন মোতাবেক সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করেছে। সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮৯ টি উপজেলায় এবং ১৮টি উপজেলায় নৌবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজে নিয়োজিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যেকোনো দায়িত্ব পালন করবে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করায় বিএনপির নাশকতা পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় বিএনপি নেতারা এখন সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য দিতে শুরু করেছেন। একটি পেশাদার সুশৃঙ্খল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়ে এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
সারাদেশে নৌকার প্রার্থীদের ওপর হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে নানক বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ঐক্যফ্রন্ট সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় গতকাল সিলেটে কাওসার আহমেদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া ৪ জনকে আহত করা হয়েছে, আটটি আওয়ামী লীগ অফিসে ও গাড়িবহরে হামলা করা হয়, চারটি স্থানে বোমা হামলা করা হয়। গতকাল দিনাজপুরে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করেছে। তার হাতের দুটো আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়।’
নানক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা ৬ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। তাদের হামলায় ৪৪৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে, আওয়ামী লীগের ১৭৮টি অফিস, গাড়ি বহর ও নির্বাচনী কেন্দ্র ভাঙচুর করা হয়েছে। ৫৮টি বোমা হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, ৮৮টি অফিস ও যানবাহনে আগুন দিয়েছে। সারাদেশে ৫৪টি জেলার ১৭০টি আসনে বিএনপি-জামায়াত এ ধরনের সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আমরা এ বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাই।’
পর্যবেক্ষক হিসেবে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য নামানো হচ্ছে-এমন অভিযোগ করে লিখিত বক্তব্যে নানক বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের মদদপুষ্ট একাধিক সংগঠনকে পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে তার আড়ালে হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মীকে মাঠে নামানো হচ্ছে বলে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের সংস্থা খান ফাউন্ডেশন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রহমানের ডেমোক্রেসি ওয়াচ, তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বগুড়া ভিত্তিক লাইটহাউস, বিতর্কিত আইনজীবী আদিলুর রহমানের (যিনি বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন এবং হেফাজতে ইসলামের সময় ব্যাপক মিথ্যাচার করেছিলেন) সেই আদিলুর রহমানের বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদ এবং বিএনপি- জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে লবিস্ট ফার্ম এনফ্রেল নামের একটি সংস্থাকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এসব সংস্থার নামে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডার বাহিনীর হাজার হাজার সদস্যকে পর্যবেক্ষক হিসেবে মাঠে নামানো হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের দলীয় প্রতিষ্ঠানের নামে সাড়ে ৬ হাজার পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়ায় নির্বাচনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এরা দলের পক্ষে কাজ করে নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বিনষ্ট করতে তৎপরতা চালাতে পারে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন বিতর্কিত পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং ইউরোপের আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য প্রণীত কোড অব কন্ডাক্ট বিরোধী। আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তারা নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ কাজ করলে নির্বাচনকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাবে। তাই তাদের বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নানক বলেন, ‘বিএনপি- জামায়াত শুধু ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করছে না। তারা আওয়ামী লীগের ব্যাচ, নৌকার ব্যাচ, নৌকার মনোগ্রাম সংবলিত শীতকালীন মাফলার ও গেঞ্জি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে সেই দায় দায়িত্ব আমাদের মাথার ওপর চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ ব্যাপারে আমরা সজাগ এবং দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর সবুর, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
এইউএ/এনডিএস/এমকেএইচ