তফসিলের পর কক্সবাজারে ৫৬ মামলা, গ্রেফতার ৩শ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনের ৮টি থানার মধ্যে ৭টি থানায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলা, নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস, প্রচার গাড়ি ভাঙচুরসহ নাশকতামূলক নানা কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে দায়ের করা এসব মামলায় দলের বিভিন্ন স্তরের প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
এসব মামলায় বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক, প্রবাসী, হাজতি, শিশু ও পাগলসহ নিরপরাধ অনেককে আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতারা। তাদের দাবি, এসব মামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩শ জনকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তছনছ করা হয়েছে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীর বসতঘর ও বাড়ির প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র।
বিএনপি নেতারা আরও দাবি করেন- মামলার পর থেকে গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আসামি হওয়া জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা এবং সক্রিয় কর্মীরা। এতে প্রচারণাসহ সব ধরনের কর্মকাণ্ড চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে প্রার্থীদের।
বুধবার সন্ধ্যায় জেলার চারটি আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও তাদের সমন্বয়কগণ অভিযোগ আকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী হাসিনা আহমদের একান্ত সহকারী সফওয়ানুল করিম জানান, তফসিলের পর থেকে পেকুয়া থানায় এ পর্যন্ত ৮টি মামলা হয়েছে। আর চকরিয়া থানায় হয়েছে ৭টি। এসব মামলায় পেকুয়ায় ৭-৮শ ও চকরিয়া থানায় প্রায় ৫শ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় তিনি নিজেসহ পাগল, প্রবাসী, কারান্তরীণসহ নিরীহ অনেককে আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুই উপজেলায় বিভিন্ন পার্যায়ের অর্ধশত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির দফতর সম্পাদক ইউছুফ বদরী জানান, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের মহেশখালীতে এ পর্যন্ত ৪টি মামলা হয়েছে। এতে আসামি হয়েছে প্রায় তিন শতাধিক। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাসহ গ্রেফতার হয়েছেন ১৩ জন। কুতুবদিয়া থানায় নতুন কোনো মামলা না হলেও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেনসহ আটজনকে গ্রেফতার করে পুরোনো মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজলের একান্ত সহকারী দেলোয়ার হোসেন জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকে সদর ও রামুতে ধানের শীষ সমর্থক প্রায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ২৪টি মামলা রুজু করা হয়েছে। এসব মামলায় ইতোমধ্যে দেড়শতাধিক জনকে গ্রেফতার করে কারান্তরীণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
ধানের শীষ প্রার্থী কাজলের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে রামু থানায় ১৮টি এবং কক্সবাজার সদর থানায় ৬টি মিথ্যা মামলা রুজু হয়েছে। এতে ২৩ দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ ধানের শীষের প্রায় আড়াই হাজার কর্মী-সমর্থককে আসামি করা হয়েছে এবং এসব মামলায় এই পর্যন্ত দেড় শতাধিক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া সদর থানায় আরও ৪টি মিথ্যা মামলা রুজুর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানতে পেরেছি।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরীর ছোট ভাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরোয়ার জাহান চৌধুরী জানান, তফসিলের পর থেকে এ পর্যন্ত উখিয়া থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৫টি মামলায় দুই শতাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে। উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরীসহ ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ছাড়া টেকনাফে দায়ের করা ৮টি মামলায় ৫ শতাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে। আটক করে কারান্তরীণ করা হয়েছে প্রায় অর্ধশত জনকে।
তিনি আরও জানান, ধানের শীষের প্রচারণা বাধাগ্রস্ত করতে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি ‘ব্লক রেইড’ চালানো হচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে শত শত নেতাকর্মী।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও কক্সবাজার-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী বলেন, নৌকার প্রার্থীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে কোনো আসনেই আতঙ্ক ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যেখানেই গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, সেখানেই পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে নৌকার প্রার্থী। পুলিশকে জানানো হলে তারা আমাদের গণসংযোগে যেতে নিষেধ করেন।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের অফিস ভাঙচুর, বাড়িঘর ভাঙচুর, নেতাকর্মীদের মারধর ও হুমকির কারণে এক প্রকার নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণা বন্ধ রয়েছে। ভোটের দিন ধানের শীষের সমর্থনে কেন্দ্রে যেন কাজ করতে না পারে সেজন্য শত শত নেতাকর্মীকে আসামি করে একের পর এক মিথ্যা মামলা রুজু করা হচ্ছে।
জেলা বিএনপি সভাপতির অভিযোগ, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি পুলিশও যেন আমাদের প্রতিপক্ষ। পুলিশ একেতো মিথ্যা মামলা দিচ্ছে, তার ওপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিলে ধানের শীষের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালাচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ-দলমত নির্বিশেষে সকলের ট্যাক্সের পয়সায় লালিত রাষ্ট্রীয় একটি বাহিনীর কিছু লোকের এমন আচরণ অন্যায্য ও অবিচারমূলক। এমন নারকীয় পরিস্থিতিতে জীবন নিয়েই শঙ্কায় রয়েছি আমরা।
এমন পরিস্থিতি করার দরকার হলে নির্বাচন দেয়ার কী প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, চলমান নির্যাতন একাত্তরে পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের চেয়েও নির্মম। সেসব নির্যাতনের জবাব ৩০ ডিসেম্বর ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণ ফেরত দেবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন জানান, মিথ্যা মামলা করার অভিযোগটি সত্য নয়। যেখানে যে ঘটনা ঘটেছে তার বিপরীতেই মামলা নথিভূক্ত হয়েছে এবং ঘটনায় যারা সম্পৃক্ত বলে অভিযোগকারীরা নাম দিয়েছেন তারাই আসামি হয়েছে। পরে তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ না হলে তারা চার্জশিট থেকে বাদ যাবেন। পুলিশ কারো প্রতিপক্ষ নয়। আমরা শৃঙ্খলা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
সায়ীদ আলমগীর/এমবিআর/আরআইপি