ঢাকা-১১ : প্রচারণায় এগিয়ে আ.লীগ, পিছিয়ে বিএনপি
রাজধানীর অলিগলি, পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে চায়ের দোকান হয়ে গণপরিবহন সর্বত্র এখন মূল আলোচনা আসন্ন জাতীয় একাদশ নির্বাচনকে ঘিরে। চারদিকে ভোটের উৎসবমুখর প্রচারণা। অন্যদিকে সব দলের সব প্রার্থীরাই ভোটের মাঠে পার করছেন ব্যস্ত সময়। চলছে প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ, মিছিল, মাইকিং, শোডাউনসহ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা ঘিরে এমনই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটারদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনার যেন শেষ নেই। ভোটের উত্তাপ তুঙ্গে আর পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে সয়লাব রাজধানীর প্রায় সব অলিগলি। অলিগলি, পাড়া-মহল্লার আড্ডায় শুধু নির্বাচনী আলোচনা, সেই সঙ্গে চায়ের কাপেও উঠেছে নির্বাচনী আলোচনার ঝড়। আলোচনা বাদ নেই সেলুনেও। তরুল, বৃদ্ধ, দোকানিসহ সবাই আসন্ন নির্বাচন নিয়ে উচ্ছ্বসিত আবার শঙ্কিতও।
নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কি আবারো ক্ষমতায় থাকবে পারবে? না কী জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় যাবে? সব পক্ষের প্রার্থীদের দোষগুলো কী, গুণ বা কী? এসব বিষয় নিয়ে চায়ের দোকানগুলোতে চলছে নানা চুলচেরা বিশ্লেষণ।
চায়ের দোকানগুলোতে বাড়ছে ভিড়। চলছে নির্বাচনী আড্ডা ও তর্ক-বিতর্কও। আড্ডায় আড্ডায় চায়ের দোকানেও বসে আগ্রহী ভোটের যত হিসাব-নিকাশ। এ হিসাব কষতে কষতে কখনও গভীর রাতও হয়ে যায়।
ঢাকার অন্যান্য আসনগুলোর মতো ঢাকা-১১ আসনেও চলছে নির্বাচনী ঝড়। পাড়া-মহল্লা ছেয়ে গেছে ব্যানার, পোস্টারে। তবে বেশিরভাগ এলাকায় নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেলেও তেমন একটা দেখা নেই ধানের শীষের পোস্টারের। রাজধানীর এই আসনে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, বনশ্রী ঘুরে প্রায় সব অলিগলির চায়ের দোকান, সেলুনে লক্ষ্য করা গেছে আড্ডার আলোচ্য বিষয় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে।
রাজধানীর উত্তর বাড্ডার সাতারকুল রোডের একটি চায়ের দোকানি এরশাদ আলী ব্যস্ত সময় পার করছেন তার দোকানে। তিনি জানালেন, ইদানিং তার দোকানে চা বিক্রি বেড়ে গেছে। এরশাদ আলী বলেন, ‘আমার দোকানে পাড়া-মহল্লার সবাই এসে বসছেন, চা খাচ্ছেন আর আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা, বিশ্লেষণ এবং তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে চা বিক্রি, সেই সঙ্গে একেকজন একের পর এক চা পান করে চলেছেন।’
দক্ষিণ বাড্ডা-সংলগ্ন চায়ের দোকানের পাশেই দেখা গেল একদল তরুণ। তাদের আলোচনার বিষয়ও আসন্ন নির্বাচন। এদের মধ্যে একজন চয়ন আহমেদ। এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন তিনি। চয়ন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমান সময়ে চায়ের দোকান, অলিগলি সব জায়গায় আলোচনার বিষয় নির্বাচন। আমরা এবার নতুন ভোটার তাই আমাদেরও আগ্রহ অনেক বেশি। এখন যেখানে যাচ্ছি সেখানেই দেখছি নির্বাচনী আলোচনা। তাদের সবার মতো আমরাও নির্বাচনী আলোচনায় ব্যস্ত।’
ঢাকা-১১ আসনেও চলছে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার উৎসব। এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন দলটির বর্তমান এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহ। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম আরা বেগম। তিনি বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। শামীম আরা বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এম এ কাইয়ুমের সহধর্মিনী। তিনি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণায় বিভিন্নভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে আমাদের। পোস্টার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে।’
এই আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের এ কে এম রহমতুল্লাহর পক্ষে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ছেয়ে গেছে ব্যানার, পোস্টারে। তার পক্ষে গণসংযোগে অন্যদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন থানা আওয়ামী লীগের কর্মী তমাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমরা সবার কাছে গিয়ে আমাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট ও দোয়া চাচ্ছি। যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই দেখা যাচ্ছে নৌকার জোয়ার।’
এই আসনে বড় দুই দলের প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীরা হলেন জাতীয় পার্টির এস এম ফয়সাল চিশতী (লাঙ্গল), গণফোরামের মোজাম্মেল হক-বীর প্রতীক (উদীয়মান সূর্য), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল বাতেন (কাঁঠাল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আমিনুল ইসলাম (হাতপাখা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. মিজানুর রহমান (আম), বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শরীফ মো. মিরাজ হুসেইন (হারিকেন)।
ঢাকা-১১ আসনটি রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বাড্ডার ২১ নম্বর ওয়ার্ড, রামপুরার ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং বাড্ডা, বেরাইদ, সাঁতারকুল ও ভাটারা ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এলাকাটি ঢাকা-৫ আসনের অংশ ছিল। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে বাড্ডা-রামপুরা-ভাটারার অংশ নিয়ে ঢাকা-১০ আসন গঠিত হয়। পরের নির্বাচনে ফের পুনর্বিন্যাসের মধ্যদিয়ে আসনটি হয় ঢাকা-১১।
প্রসঙ্গত, তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে প্রার্থী ও তার সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এএস/এসআর/এমএস