টানা দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী বিএনপিও চায় না
পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, সংবিধানে ‘গণভোট’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা, র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত অনুসন্ধান রিপোর্ট প্রকাশ করা, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি এবং উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর প্রকাশ করা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় যেন সাধারণ মানুষের কোনো ভোগান্তি না হয় সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছে বিএনপি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মঙ্গলবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে ইশতেহার পড়ে শোনান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ সময় ঘোষণা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, মঈন খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এর আগে গতকাল সোমবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার দেয় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ওই ইশতেহারেও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়- ‘টানা দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না’। আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী এ জোটটির প্রধান দল বিএনপি।
বিএনপির ১৯ দফা ইশতেহারের প্রথম দফাতেই রাখা হয়েছে ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসন’। ২২টি পয়েন্টে বর্ণনা করা এ দফার তিন নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে-‘একাধারে পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান করা হবে।’
দফাটির প্রথম পয়েন্টে বলা হয়েছে- ‘বিএনপি নির্বাচনের দিনের গণতন্ত্রকে নিত্যদিনের অনুশীলনে পরিণত করবে।’
র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, র্যাবের বর্তমান কাঠামো পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠন করা হবে। এই ব্যাটেলিয়ন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। রাষ্ট্রের সকল সামরিক ও বেসামরিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা স্ব স্ব চার্টার অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
সংবিধানে ‘গণভোট’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয়েছে, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে ‘জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সংবিধানে ‘গণভোট’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃস্থাপন করা হবে।
গণতন্ত্র ও আইনের শাসন দফার ২০ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে- ‘প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি এবং উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর প্রকাশ করা হবে।’
বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে বিএনপির ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, ‘বিডিআর হত্যাকাণ্ডের এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত সকল অনুসন্ধান রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে এবং অধিকতর তদন্তের উদ্যোগ নেয়া হবে।’
‘রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় যেন সাধারণ মানুষের কোনো ভোগান্তি না হয় সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’ বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা এ দলটি।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনতে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে, মন্ত্রিসভাসহ প্রধানমন্ত্রীকে সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করা হবে।
বিএনপি বলছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে শর্তসাপেক্ষে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ দেয়া হবে। সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় সংসদকে সকল জাতীয় কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা হবে।
এমএএস/এনএফ/পিআর