বিএনপি সরে যাবে বলে প্রার্থিতায় জোট নিয়ে কৌশল : ওবায়দুল কাদের
জোটের আসন ভাগাভাগির পরও বিভিন্ন আসনে শরীকদের নিজেদের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টিকে আওয়ামী লীগের ‘কৌশল’ বলে জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি জানান, বিএনপি ভোট থেকে সরে যাবে বলে প্রার্থিতায় জোট নিয়ে এ কৌশল।
বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
জোটের মধ্যে আসন ভাগাভাগির পরও বিভিন্ন আসনে শরীকরা নিজেদের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন- এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এটা আমাদের কৌশল। কৌশলটা তো বলব না। এমনিই ছেড়ে দিয়েছি আমরা? আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অ্যালায়েন্স দাঁড়িয়ে গেছে, আমরা না বুঝে কী দিয়েছি এটা।’
এরপরই মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের দিন বুঝতে পারবেন। ওনারা (বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট) যদি (নির্বাচন থেকে) সরে যায়? তারপর? আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরি করতে দেব না।’
বিএনপি বলছে আওয়ামী লীগ তাদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘না না, তারা সরে যাবে বলেই আমরা অ্যালায়েন্সকে নিয়ে কৌশল করেছি।’
নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সহিংসতায় আহত-নিহতের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সহিংসতা, নাশকতা গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ। সহিংসতার মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে এটাই স্বভাবিক। আমরা যতদূর সম্ভব দল ও অ্যালায়েন্সকে সতর্ক থাকতে বলেছি। যাতে দেশে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট না হয়। এ ব্যাপারে আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছি এবং যে সব জায়গায়গুলো ভায়োলেন্স প্রবণ সেসব জায়গায় বিশেষভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের সংযত থাকতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘এবার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহিংসতা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাওয়ার কথা। কারণ এবার বিদ্রোহী প্রার্থী অনেক কম। আমাদের দলের মাত্র ১০-১১ জন বিদ্রোহী প্রার্থী। এরাও অনেকে হয়তো সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবে, কারণ নিয়মানুযায়ী এখন আর প্রত্যাহারের সুযোগ নেই।’
সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি একজন প্রার্থী, আপনার পক্ষে জনমত যদি প্রবল হয় আমি তো মনে করি না কেউ বাধা দেয়ার সাহস পাবে। জনস্রোত যখন বইতে থাকে সেটা বাধা দেবার সাহস কারও হবে? দেশের জনগণের সেন্টিমেন্টটা ভালো করেই জানেন। এখন কারো যদি অবস্থান দুর্বল হয়, দুর্বল অবস্থানের কারণে তারা পিছিয়ে যায়, অবস্থানটা সবল হলে এগিয়ে যেতে পারে। কারও মিটিং এ পুলিশ বাধা দিয়েছে সেরকম কি হয়েছে। একটা দুইটা বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘যাদের জনমত আছে জেতার ব্যাপারে আশাবাদী তারা কোনো অবস্থাতেই ভায়োলেন্স করে জনগণের অপছন্দের পাত্র হতে যাবে না। দুর্বল পার্টি বেশি বেশি গোলমাল করে। জেতার ব্যাপারে যারা আশাবাদী তারা গোলমাল করতে যাবে না।’
‘ইলেকশন রিলেটড ভায়োলেন্স, আগামী দিনগুলোতে নাও থাকতে পারে, আমার বিশ্বাস থাকবে না’ বলেন মন্ত্রী।
নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ আসছে- এ বিষয়ে কাদের বলেন, ‘লেবেল প্লেইং ফিল্ড হয়েছে কিনা সেটা নির্বাচন কমিশন দেখবেন। আমি কোনো অসুবিধা দেখছি না। লেভেল প্লেইং ফিল্ড কাকে বলে? আমি আমার গাড়িতে পতাকা ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে এলাকায় গেছি। প্রটেকশন তো দিতে পারে। যারা বিপক্ষ যেমন ধরেন মওদুদ আহমেদ সাহেবকেও নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র একটি ফ্রি ফেয়ার নির্বাচন আশা করে। আমি বলেছি এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ অনেক ভালো তাই প্রত্যাশা করছি পিসফুলি হবে। জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে, সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না শুধু নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। যাতে নিউট্রাল ভূমিকা পালন করতে পারে।’
রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মন্ত্রীর সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, বিশ্বাসযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে, যা আমি ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বলেছি। নির্বাচনী সহিংতার বিষয়ে কথা হয়েছে এবং বলা হয়েছে সবার এটা পরিহার করা উচিত। কারণ গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় এটি অংশ হতে পারে না। সহিংতা এড়িয়ে যেতে হবে কারণ সহিংসতা নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
আরএমএম/আরএস/এএইচ/আরআইপি