দুর্দিনেও মনোনয়ন বাণিজ্যে বিএনপি!
সময়ের সবচেয়ে দুর্দিনে রয়েছে বিএনপি। বলা হয়, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর যে সঙ্কটে পড়েছিল এখন তার চেয়েও বড় সঙ্কটে রয়েছে বিএনপি। টানা এক যুগ ক্ষমতার বাইরে। দলের চেয়ারপারসন ১০ বছরের সাজায় জেলের ঘানি টানছেন। সত্তরোর্ধ্ব বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো নেই বলেও খবর মিলছে।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাসনে বহু বছর ধরে। যাবজ্জীবন সাজার বেড়ি তারেকের পায়ে। জিয়া পরিবারের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেল ক’বছর হলো। হাজার হাজার মামলা বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে। মামলার জালে জর্জরিত বিএনপির শীর্ষ নেতারাও। কারাবন্দি কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই। গ্রেফতার হচ্ছেন এখনও।
দুর্দিনে জিয়া পরিবার, দুর্দিনে বিএনপি। তবুও মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ থেকে বের হতে পারল না দলটি। মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ খোদ তারেক রহমানের বিরুদ্ধেই। মূলত লন্ডনে থেকেই বাণিজ্যের কলকাঠি নাড়ছেন তারেক, এমন অভিযোগ নেতাকর্মীদের। অভিযোগকারীরা বলছেন, বাণিজ্য বা বিশেষ বিবেচনায় যিনি তারেকের ডেরায় ভিড়তে পেরেছেন, তারই কপাল খুলেছে এবার। মনোনয়ন নিয়ে যে নাটক মঞ্চায়ন করছে বিএনপি, তা মূলত তারেক রহমানের ইশারাতেই।
নারায়ণগঞ্জ থেকে ধানের শীষ প্রতীক চেয়ে মনোনয়ন কিনেছিলেন বিএনপির প্রথম সারির এক নেতা। রাজনীতির কারণে একাধিকবার জেলও খেটেছেন। ডজন খানিক মামলা এখনও চলমান। দলের পক্ষ থেকে প্রার্থী করার আশ্বাস দেয়া হয়েছিল আগে থেকেই। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দেয়া হয়নি তাকে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বিপরীতে যাকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হলো কোনো বিবেচনাতেই তিনি এগিয়ে নেই। তিনি অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকতেন। জনসংযোগও নেই। মূলত টাকার বিনিময়ে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে এবং সেটা চূড়ান্ত হয়েছে লন্ডন থেকেই।’
অভিযোগ উঠছে, মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণেই চাঁদপুরে এহসানুল হক মিলন অথবা নারায়ণগঞ্জে তৈমুর আলম খন্দকারের মতো ত্যাগী নেতা মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার তারেকের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসা গোলাম মাওলা রনির মতো ব্যক্তিরা ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারের জুলুম-নির্যাতন সয়েও মনোনয়ন না পাওয়ায় ফুঁসছেন বঞ্চিতরা। হিংসার আগুনে পুড়ছে বিএনপির ঘর। হামলা, ভাঙচুর, তালা লাগানো-সবই হলো বিএনপির কেন্দ্রীয় ও চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা হামলা করল বিএনপি মহাসচিবের গাড়িতেও।
বিএনপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ পুরনো। ‘টাকার বিনিময়ে মনোননয়ন’ এমন নীত অবলম্বন করার কারণেই সমালোচকরা মনে করেন, ‘বিএনপি এলিটদের ক্লাব’। কিন্তু তাই বলে একই অভিযোগ এমন দিনেও!
যে সময় বিএনপি অস্তিত্বের প্রশ্ন সামনে আসছে, সেই সময় মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিএনপির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় বিব্রত জোটের শরিকরাও। ২০ দলীয় জোট শরিক ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা সরকার পতনের জন্য একাট্টা। অথচ বিএনপির মনোনয়ন বাণিজ্যে আমরা হতবাক হয়েছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেই মনোনয়ন দেয়ার প্রত্যাশা করেছিলাম। বাণিজ্যের অভিযোগ কেউ তুলবে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত ছিল না। এ সময়ে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠায় আমরা বিব্রত।’
তিনি বলেন, ‘আদৌও বাণিজ্য হয়েছে কি-না, তার কোনো তথ্য নেই। হয়ত মনোনয়ন বঞ্চিতরা বিক্ষুব্ধ হয়েই এমন অভিযোগ আনতে পারে। বড় দল, হাজার হাজার মনোনয়ন প্রত্যাশী। অনেকেই এমপি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেন। তাদের ত্যাগ থাকে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করা ঠিক হবে না।’
বিএনপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়টি জোটের শরিকরা কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর বলেন, ‘বিএনপির জনসমর্থন এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি। দলটির নেতারা নির্যাতিত হয়ে আসছেন টানা দশ বছর ধরে। তাদের প্রত্যাশা একটু বেশিই হবে। ফলে মনোনয়ন বঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাবে, এটি খুবই স্বাভাবিক।’
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্যের অভিযোগ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও উঠেছে। আমরা পরিবর্তন চাইছি। আর একদিনেই পরিবর্তন আসবে এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। তবে মানুষের আবেগ ধারণ করতে হলে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে এবং সেটা সর্বক্ষেত্রে। ঐক্যফ্রন্টের বিরুদ্ধে না উঠলেও বিএনপির বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠা কাম্য ছিল না।’
এএসএস/এনডিএস/পিআর