সম্পদের ছড়াছড়ি শাজাহান খানের
সম্পদের ছড়াছড়ি মাদারীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের। রাজধানী ঢাকা, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরে নিজ, স্ত্রী ও ছেলের নামে রয়েছে গাড়ি, বাড়ি, জমি ও অ্যাপার্টমেন্ট। সাধারণ ব্যবসা থেকে বছরে তিন কোটি তিন লাখ ৬২ হাজার ২৫০ টাকা আয় করেন। ২০০৮ সালে সাধারণ ব্যবসা থেকে মাত্র এক লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় হলেও ২০১৩ সালে এই খাত থেকে কোনো আয় ছিল না। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভাড়াবাবদ দুই লাখ ৩৯ হাজার ৪২৯ টাকা আয় করছেন তিনি। ২০১৩ সালে এই খাতে কোনো আয় ছিল না। ২০১৩ সালে মন্ত্রী হিসেবে পরিতোষিক ও ভাতাদি ছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে মাত্র ২২ হাজার ১২৯ টাকা আয় করতেন তিনি। তখন এ ছাড়া কোনো খাত থেকেই কোনো আয় ছিল না সরকারের এই মন্ত্রীর। বর্তমানে ভাড়া, ব্যবসা, মন্ত্রী হিসেবে পারিতোষিক ও ভাতাদির পাশাপাশি ব্যাংক আমানতের লাভ থেকে দুই লাখ ৯১ হাজার ২০০ টাকা আয় করছেন তিনি।
তিনটি হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে শিক্ষকতা থেকে স্ত্রীর মাসিক আয় ছিল পাঁচ হাজার ২০০ টাকা। ২০১৩ সালে চাকরি ও ব্যবসা থেকে স্ত্রীর বার্ষিক আয় ছিল পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা, আর সঞ্চয়পত্র থেকে ছেলের আয় ছিল তিন লাখ ৭০ হাজার টাকা। এবারের হলফনামায় মন্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের কোনো আয়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ২০০৮ সালে তিনটি অ্যাকাউন্টে মোট তিন লাখ ৩৪ হাজার ৬০৪ টাকা জমা ছিল, ওই সময়ে স্ত্রীর নামে ১২ হাজার ৪৭০ টাকা। ২০১৩ সালে স্ত্রীর নামে ব্যাংকে কোনো টাকা জমা না থাকলেও নিজ নামে ১৮ লাখ টাকা জমা ছিল। যা এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে নিজ নামে এক কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৩১১ টাকা ও স্ত্রীর নামে ২০ লাখ ৯১ হাজার ৪৩৬ টাকা। বিগত দুই নির্বাচনে নগদ টাকা না থাকলেও এবার নিজের কাছে ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৪১৩ টাকা ও স্ত্রীর কাছে ২৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬৪ টাকা আছে।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে ৫২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৪৪ টাকা মূল্যে নিজ নামে একটি জিপ, স্ত্রীর নামে ২৪ লাখ টাকা মূল্যের দুটি বাস, ১২ লাখ টাকা মূল্যের একটি কার, চার লাখ টাকা মূল্যের একটি মাইক্রো ও প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি বাস ছিল। ২০১৩ সালে প্রার্থীর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তির নামে ও স্ত্রীর নামে কোনো পরিবহন না থাকলেও নিজ নামে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের একটি জিপ ছিল। বর্তমানে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা মূল্যের দুটি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস রয়েছে এই মন্ত্রীর।
হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে কৃষি জমি হিসেবে পৈত্রিক সূত্রে পাঁচ কাঠা কৃষি জমি ছিল, যা ২০১৩ সালে এসে দাঁড়ায় এক একর ৫ শতাংশ, বর্তমানে পূর্বের সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে ছয় লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের চার শতাংশ ও ২২ লাখ টাকা মূল্যের ৬৩ শতাংশ কৃষি জমি।
তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে এক লাখ ১৯ হাজার ৯৫৩ টাকা মূল্যের ৬৪ শতাংশ অকৃষি জমি ছিল শরীয়তপুরে, যা ২০১৪ সালে অপরিবর্তিত থাকলেও বর্তমানে ৮৬ হাজার ৯০ টাকা মূল্যের ২ দশমিক ৪ শতাংশ, ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের দশমিক ৬৫ শতাংশ, ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৫ শতাংশ, ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা মূল্যের ৩ শতাংশ, দানপ্রাপ্ত ৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৬০ শতাংশ অকৃষি জমি বৃদ্ধি পেয়েছে।
হলফনামা থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালে ছয় লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের তিনতলা দালান ছিল মাদারীপুরে। ২০১৩ সালে আট লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের একটি আবাসিক ভবনের পাশাপাশি রাজউক পূর্বাচলে ১২ লাখ টাকার কিস্তি চলছিল। বর্তমানে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা মূল্যের আবাসিক ভবন, ৬৩ লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের একটি নির্মাণাধীন বাড়ি, ৮৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের দুই দশমিক ৪৫ শতাংশে যৌথ মালিকানাধীন অ্যাপার্টমেন্ট, লালমাটিয়ায় হেবাপ্রাপ্ত ৪১৫ বর্গমিটারের ফ্ল্যাট, রাজৈরে পাঁচ দশমিক ৭৩ শতাংশ যার মূল্য ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, রাজৈরে দুই শতাংশের মূল্য পাঁচ লাখ টাকা, রাজৈরে ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের তিন শতাংশ জমি নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে।
হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ ও ২০১৩ সালে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ছিল, যা বর্তমানে মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে তিন লাখ দুই হাজার টাকা হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রায় অর্ধকোটি টাকা দায় থাকলেও বর্তমানে কোনো দায় নেই শাজাহান খানের।
এইউএ/বিএ